Thursday, June 21, 2018

রাসুল (সাঃ) ঘুমানোর পূর্বে যে আমলগুলো করতেন-

রাসুল (সাঃ) ঘুমানোর পূর্বে যে আমলগুলো করতেন-
রাসুল (সাঃ) ঘুমানোর পূর্বে যে আমলগুলো করতেন-
====================================
১- ঘুমানোর পূর্বে ওযু করে নেওয়া- আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ওযু অবস্থায় রাত্রি যাপন করে তার অন্তর্বাসে এক ফিরিশ্তাও রাত্রিযাপন করেন। সুতরাং যখনই সে জাগ্রত হয় তখনই ঐ ফিরিশ্তা বলেন, ‘হে আল্লাহ! তোমার বান্দা অমুককে ক্ষমা করে দাও, কারণ সে ওযু অবস্থায় রাত্রি যাপন করেছে।’’(ইবনে হিববান, সহীহ তারগীব ৫৯৪)
তিনি আরো বলেন, যে কোনও মুসলিম যখনই ওযু অবস্থায় রাত্রিযাপন করে, অতঃপর রাত্রিতে (সবাক্) জেগে উঠে ইহকাল ও পরকাল বিষয়ক কোন মঙ্গল প্রার্থনা করে, তখনই আল্লাহ তাকে তা প্রদান করে থাকেন।’’(আবু দাঊদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, সহীহ তারগীব ৫৯৫)

২- শয়ন অবস্থায় দুই হাতের তালু একত্রে মিলিয়ে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে তাতে ফুঁ দিবে : তারপর দুই হাতের তালু দ্বারা দেহের যতোটা অংশ সম্ভব মাসেহ করবে। মাসেহ আরম্ভ করবে তার মাথা, মুখমণ্ডল ও দেহের সামনের দিক থেকে। (এভাবে ৩ বার করবে অর্থাৎ সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে মাসাহ করবে তাহলে ১ বার হল তারপর আবার সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে মাসাহ করবে তাহলে ২ বার হল এরপর আরও ১ বার করবে সর্বমোট ৩বার) (বুখারি-৫০১৭)
৩- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসী পড়বে শয়তান সারা রাত তার নিকটে যাবে না।(বুখারি-২৩১১)
৪- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত (আ-মানার রাসূলু–) তেলাওয়াত করবে এটা তার জন্য যথেষ্ট হবে ”। (বুখারি- ৪০০৮)
৫- নবী (সাঃ) বলেছেন, রাতে (কুল ইয়া আইয়্যু হাল কা-ফিরুন) (অর্থাৎ সূরা কা-ফিরুন) পাঠ করা শির্ক থেকে মুক্তি পেতে উপকারী। (সহীহ তারগীব-৬০২)
৬- একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার সাহাবাদের বললেন, “তোমাদের কেউ কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অসমর্থ হবে?” এতে সকলকে বিষয়টি ভারী মনে হল। বলল, একাজ আমাদের মধ্যে কে পারবে, হে আল্লাহর রাসূল?! তিনি বললেন, সূরা ইখলাস হল এক তৃতীয়াংশ কুরআন।(বুখারী- ৫০১৫) [১ বার সুরা ইখলাস পড়া]
৭- “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন তখন তাঁর ডান হাত তাঁর গালের নীচে রাখতেন, তারপর এ দো‘আটি বলতেন।”
« اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا».
(আল্লাহুম্মা বিস্‌মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া)।
“হে আল্লাহ ! আপনার নাম নিয়েই আমি মরছি (ঘুমাচ্ছি) এবং আপনার নাম নিয়েই জীবিত (জাগ্রত) হবো।(বুখারি- ৬৩২৪)
৮- ডান কাতে শুয়ে ও ডান হাত গালের নিচে দিয়ে নিচের দোয়াটি পড়বেন.
اللَّهُمَّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ».
(আল্লা-হুম্মা ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব‘আছু ‘ইবা-দাক)
“হে আল্লাহ! আমাকে আপনার আযাব থেকে রক্ষা করুন, যেদিন আপনি আপনার বান্দাদেরকে পুনর্জীবিত করবেন। (তিরমিজি- ৩৩৯৮)
৯- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী এবং ফতেমা (রাঃ)- কে বলেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু বলে দিবো না যা তোমাদের জন্য খাদেম অপেক্ষাও উত্তম হবে? যখন তোমরা তোমাদের বিছানায় যাবে, তখন তোমরা ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, এবং ৩৪ বার আল্লা-হু আকবার বলবে, তা খাদেম অপেক্ষাও তোমাদের জন্য উত্তম হবে’’। (বুখারী- ৩৭০৫)
১০- রাসূল (সাঃ) বলেন : “যে ব্যাক্তি প্রত্যেক রাতে তাবারকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক (সুরাহ মূলক) পাঠ করবে এর মাধ্যমে মহিয়ান আল্লাহ্ তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন (সহিহ নাসাই, সহিহ তারগিব, হাকিম-৩৮৩৯, সিলসিলাহ সহিহাহ-১১৪০, শায়খ আলবানী রঃ হাদীছটি হাসান সহিহ বলেহেন, দ্র: সহীহ তারগীব ও তারহীব, হা/ ১৪৭৫ ও ১৪৭৬)
#মুখস্ত বা দেখে দেখে উভয় ভাবেই পড়া যাবে আর এটা ঘুমের আগে পড়াও শর্ত নয় বরং মাগ্রিবের পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত রাতের যে কোন সময় পড়লেই হবে]
১১- রাতে এক শো আয়াত পাঠ করা- তামিমে দারি ‎রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‎ বলেছেন: “যে ব্যক্তি রাতে এক শো আয়াত পাঠ করল, তার জন্য পূর্ণ রাতের কিয়াম (সারা রাত ধরে নামাজ আদায়ের সওয়াব) লিখা হবে”(দারেমি-৩৪৫০, শাইখ আল-বানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন)
#মুখস্ত বা দেখে দেখে উভয় ভাবেই পড়া যাবে আর এটা ঘুমের আগে পড়াও শর্ত নয় বরং মাগ্রিবের পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত রাতের যে কোন সময় পড়লেই হবে]
এক শো আয়াত পাঠ করা খুব সহজ, দশ মিনিটের বেশী সময় লাগে না। আপনার হাতে সময় কম থাকলে উদাহরণ স্বরূপ সূরা সাফ্‌ফাতের প্রথম চার পৃষ্ঠা পড়ে এ সওয়াব অর্জন করতে পারেন, অথবা সূরা কালাম ও আল-হাক্কাহ পাঠ করুন। আর সুরা মূলক পড়লে যেহেতু ৩০ আয়াত হয়ে যাচ্ছে আবার সুরা ইখলাস, সুরা কাফিরুন, আয়াতুল কুরসি, সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত পড়াতে সব মিলে ৩০+১৩=৪৩ আয়াত পড়া এমনিতেই হয়ে যাচ্ছে সেখেত্রে ১০০ হতে বাকি থাকে ৫৭ আয়াত তাই চাইলে আপনার ইচ্ছামত যে কোন ৫৭ আয়াত পড়তে পারেন কিংবা এগুলো বাদেও ১০০ আয়াত পড়তে পারেন বা তাঁরও বেশি যতটা সম্ভব।
কোন কারণে যখন পড়তে না পারেন, ফজর থেকে যোহরের আগ পর্যন্ত সময়ে পড়ে নিন। এ নিয়ে গাফিলতি করবেন না, ইনশাআল্লাহ কিয়ামুল লাইলের সওয়াব অর্জন হবে। ওমর ইব্‌ন খাত্তাব ‎রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‎ বলেছেন:
“যে তার পূর্ণ ‘হিযব’ ও অথবা আংশিক ‘হিযব’ না পড়ে ঘুমিয়ে গেল, অতঃপর সে যদি তা ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নেয়, তার জন্য গণ্য করা হবে যেন সে তা রাতেই পড়েছে”(মুসলিম-৭৪৭)
মুবারক পুরী রহ. এ হাদিস প্রসঙ্গে বলেছেন: “এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় রাতে কুরআন থেকে কিছু নির্ধারণ করে নেয়া জায়েয, যদি ঘুমের জন্য অথবা কোন কারণে তা ছুটে যায়, তাহলে তার কাযা করাও জায়েয। যে তা ফজর ও যোহর মধ্যবর্তী সময়ে কাযা করবে, সে রাতে আদায়কারী গণ্য হবে। (এই অংশটা শাইখ ডঃ মানজুর ইলাহির কিয়ামুল লাইলের সমান সওয়াব বই থেকে সংগৃহীত)
১২- রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, কেউ যদি ওযু করে ডান কাতে শুয়ে সবশেষে এ দোয়া পাঠ করে তারপর রাতে মৃত্যুবরণ করে, সে ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করবে।(বুখারী- ৬৩১১)
#ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওযু করে নিলেই যথেষ্ট, এই দোয়ার জন্য আবার আলাদা ওযু করতে হবে না]
«اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَوَجَّهْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ، آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ».
(আল্লা-হুম্মা আস্‌লামতু নাফ্‌সী ইলাইক, ওয়া ফাউওয়াদ্বতু আমরী ইলাইক, ওয়া ওয়াজ্জাহ্‌তু ওয়াজহিয়া ইলাইক, ওয়াআলজা’তু যাহ্‌রী ইলাইক, রাগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইক, লা মালজা’আ ওয়ালা মান্‌জা মিনকা ইল্লা ইলাইক, আ-মানতু বিকিতা-বিকাল্লাযী আনযালতা ওয়াবিনাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালতা)।
“হে আল্লাহ! আমি নিজেকে আপনার কাছে সঁপে দিলাম। আমার যাবতীয় বিষয় আপনার কাছেই সোপর্দ করলাম, আমার চেহারা আপনার দিকেই ফিরালাম, আর আমার পৃষ্ঠদেশকে আপনার দিকেই ন্যস্ত করলাম; আপনার প্রতি অনুরাগী হয়ে এবং আপনার ভয়ে ভীত হয়ে। একমাত্র আপনার নিকট ছাড়া আপনার (পাকড়াও) থেকে বাঁচার কোনো আশ্রয়স্থল নেই এবং কোনো মুক্তির উপায় নেই। আমি ঈমান এনেছি আপনার নাযিলকৃত কিতাবের উপর এবং আপনার প্রেরিত নবীর উপর।”
=============================================
এগুলো ছিল রাসুল (সাঃ)-এর ঘুমানোর পূর্বের আমল,

No comments:

Post a Comment

প্রশ্ন: সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যদি কেউ সারা জীবন সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতি নেয়ার পর তার জন্য করণীয় কি?

প্রশ্ন: সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যদি কেউ সারা জীবন সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতি নেয়...