অতীত ও বর্তমান যুগের মুসলমানদের মধ্যে ব্যবধান
প্রণয়নে : আব্দুল হামীদ বিন সিদ্দীক হুসাইন।
সম্পদানায়: আব্দুল্লাহিল হাদী
সম্পদানায়: আব্দুল্লাহিল হাদী
ভূমিকা: প্রশংসা মাত্র আল্লাহ তা’য়ালার জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরিবার পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামগণের উপর।
মুসলমান একটি জাগ্রত, উন্নত এবং বৈপ্লবিক জাতির নাম। যারা অতি অল্প সময়ে সারা বিশ্বে তাদের বিজয়ের শ্লোগান ছড়িয়ে দিয়েছিল। পৃথিবীর এমন কোন প্রান্তর নেই যেখানে ইসলামের বাণী পৌঁছেনি। ফলে তাঁরা মহা সম্মানিত, মহানুভব, মর্যাদাশীল এক বীরের জাতিতে পরিণত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচার ফয়সালা, ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী, সত্যবাদী ও নিষ্ঠাবান জাতি রূপে পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করে। আর তার মূল কারণ ছিল :
তাঁরা সর্বদাই একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর পরিপূর্ণ ঈমান এনেছিলেন এবং আল্লাহ কর্তৃক নাযিল কৃত কিতাব আল কুরআন ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসের উপর অটল ছিলেন। এদু’টি তাদের মূল শক্তি হওয়ার কারণে তারা এক, একক ও দ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁকে ভয় করা ছাড়া আর অন্য কাউকে ভয় পেতেন না। ফলে তারা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করতো এবং তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকেও শরীক স্থাপন করতো না। তারা আল্লাহর উদ্দেশ্যেই তাদের সকল কর্ম সম্পাদন করতো। যেমন আল্লাহ্ বলেন:মুসলমান একটি জাগ্রত, উন্নত এবং বৈপ্লবিক জাতির নাম। যারা অতি অল্প সময়ে সারা বিশ্বে তাদের বিজয়ের শ্লোগান ছড়িয়ে দিয়েছিল। পৃথিবীর এমন কোন প্রান্তর নেই যেখানে ইসলামের বাণী পৌঁছেনি। ফলে তাঁরা মহা সম্মানিত, মহানুভব, মর্যাদাশীল এক বীরের জাতিতে পরিণত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচার ফয়সালা, ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী, সত্যবাদী ও নিষ্ঠাবান জাতি রূপে পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করে। আর তার মূল কারণ ছিল :
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (162) لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ (163-162) الأنعام
“আপনি বলুন: আমার নামায, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তার কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম আনুগত্য শীল।” (সুরা আন’আম : ১৬২-১৬৩ নং আয়াত)।
মুসলমানগণ যখন মহান আল্লাহর কিতাবকে এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নতকে শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরেছিল তখনই তারা পৃথিবীতে শাসনকার্য পরিচালনা করেছিল এবং খেলাফত লাভ করে সারা দুনিয়ায় তাদের এমন সুনাম, সুখ্যাতি ছড়িয়েছিল যে, তাদের নাম শুনলেই জালিম তথা অত্যাচারী জাতি পর্যন্ত ভয়ে প্রকম্পিত হতো এবং তারা জুলুম করা থেকে নিবৃত হতো।
প্রাচীনকালের মুসলমানগণ : তাঁরা শৌর্যবীর্যে, আচার -আচরণে, বীরত্বে, ইবাদত-বন্দেগীতে, আমানতদারী ও অঙ্গীকার পূরণে ছিলেন অটল। তাঁরা সর্ব ক্ষেত্রেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশকেই প্রাধান্য দিতেন। তাদের কথার উপর আর অন্য কারো কথাকে তাঁরা প্রাধান্য দিতেন না। তাদের মধ্যে কোন বিষয়ে বিতর্ক দেখা দিলে এর সমাধানের জন্য তাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর বাণীর দিকেই ফিরে যেতেন। যেমন আল্লাহ্ তায়ালা সূরা নিসার নিন্মোক্ত আয়াত সমূহে বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا (59) أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا (60) وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا (61) فَكَيْفَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ ثُمَّ جَاءُوكَ يَحْلِفُونَ بِاللَّهِ إِنْ أَرَدْنَا إِلَّا إِحْسَانًا وَتَوْفِيقًا (62) أُولَئِكَ الَّذِينَ يَعْلَمُ اللَّهُ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَهُمْ فِي أَنْفُسِهِمْ قَوْلًا بَلِيغًا (63) وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا (64) فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا (65-59) [النساء]
প্রাচীনকালের মুসলমানগণ : তাঁরা শৌর্যবীর্যে, আচার -আচরণে, বীরত্বে, ইবাদত-বন্দেগীতে, আমানতদারী ও অঙ্গীকার পূরণে ছিলেন অটল। তাঁরা সর্ব ক্ষেত্রেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশকেই প্রাধান্য দিতেন। তাদের কথার উপর আর অন্য কারো কথাকে তাঁরা প্রাধান্য দিতেন না। তাদের মধ্যে কোন বিষয়ে বিতর্ক দেখা দিলে এর সমাধানের জন্য তাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর বাণীর দিকেই ফিরে যেতেন। যেমন আল্লাহ্ তায়ালা সূরা নিসার নিন্মোক্ত আয়াত সমূহে বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا (59) أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا (60) وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا (61) فَكَيْفَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ ثُمَّ جَاءُوكَ يَحْلِفُونَ بِاللَّهِ إِنْ أَرَدْنَا إِلَّا إِحْسَانًا وَتَوْفِيقًا (62) أُولَئِكَ الَّذِينَ يَعْلَمُ اللَّهُ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَهُمْ فِي أَنْفُسِهِمْ قَوْلًا بَلِيغًا (63) وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا (64) فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا (65-59) [النساء]
৫৯.” হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর- যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।
৬০। আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের ওপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে শয়তানের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।
৬১। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো- যা তিনি রাসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফেকদেরকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাচ্ছে।
৬২। এমতাবস্থায় যদি তাদের কৃতকর্মের দরুন বিপদ আরোপিত হয়, তবে তাতে কি হল। অতঃপর তারা আপনার কাছে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে খেয়ে ফিরে আসবে যে, মঙ্গল ও সম্প্রীতি ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না।
৬৩। এরা হল সে সমস্ত লোক, যাদের মনের গোপন বিষয় সম্পর্কেও আল্লাহ অবগত। অতএব, আপনি ওদেরকে উপেক্ষা করুন এবং ওদেরকে সদুপদেশ দিয়ে এমন কোন কথা বলুন যা তাদের জন্য কল্যাণকর।
৬৪। বস্তুত আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দিতেন, অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পেত।
৬৫। অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ইমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।” (সুরা নিসা : ৫৯ ও ৬৫ নং আয়াত)।
- – পূর্ববর্তী মুসলিমগণ ভালো কাজ কে কত বেশী করতে পারেন সেজন্য প্রতিযোগিতা করতেন।
- – তাঁরা কোর্ট-কাচারি, বিচারালয়ে নিজের বিপক্ষে হলেও সত্য সাক্ষ্য দিতেন এবং মদ, সুদ, ঘুষ, জুয়া, অন্যায় ও অবিচার করা থেকে বিরত থাকতেন।
- -তাঁদের স্ত্রী, মাও বোনগণ সর্বদাই পর্দা ও লজ্জা-শরমসহ চলা-ফেরা করতেন, ফলে তাদের মর্যাদা ও সম্মান ছিল বহু গুণ বেশী।
- -তাঁরা রাষ্ট্রীয় কোন গোপন খবর অন্য কারো কাছে ফাঁস করে দেওয়াকে গুনাহ মনে করতেন।
- – তাঁরা কোন পাপ করে ফেললে তা যতক্ষণ পর্যন্ত মাফ না হতো ততক্ষণ তারা তওবা ইস্তেগফার করতে থাকতেন এমনকি নিজে নিজেকেই তার শাস্তি দিতেন।
এর একটি জ্বলন্ত প্রমাণ মিলে সাহাবী আবু লুবাবা (বাশীর) রা. এর এই ঘটনা থেকে।
রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বনূ কুরাইযার ষড়যন্ত্রের কারণে তাদেরকে ঘেরাও করলেন। তখন তিনি ইয়াহুদীদের দুর্গে আবু লুবাবা রা. কে পাঠান যাতে ইয়াহুদীদের সাথে আলোচনা করলে হয়ত তারা দুর্গ থেকে বের হয়ে আসবে। যখন আবু লুবাবা রা. তাদের কাছে গেলেন তখন তাদের শিশু, বৃদ্ধ লোক ও মহিলারা কাঁদছিল। ইয়াহুদীরা আবু লুবাবা রা. কে জিজ্ঞেস করলেন: আপনি কি জানেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? তখন আবু লুবাবা রা. নিজের গর্দানের দিকে ইঙ্গিত করে তাদেরকে বোঝালেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদেরকে হত্যা করবেন। অতঃপর তিনি দুর্গ থেকে বের হওয়া মাত্র তার মনে পড়ল যে, তার থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে এবং এটা এক প্রকার খেয়ানত। তাই তিনি মসজিদে নববীতে গিয়ে নিজেকে খুঁটিতে বেঁধে দিয়ে বললেন: আল্লাহর কসস! আমি নিজেকে মুক্ত করব না এবং কোন প্রকার খানা-পিনাও গ্রহণ করব না, যতক্ষণ আল্লাহ তা’য়ালা আমার তওবা কবুল করবেন না। এমতাবস্থায় তিনি সাত দিন পর্যন্ত কোন কিছু না খেয়েই খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় থাকেন। এই সময়ে তার কন্যা শুধু মাত্র নামাযের সময়ে এবং মানবীয় প্রয়োজন সেরে আসার জন্য তার বাঁধন খুলে দিত। অবশেষে তিনি একদিন ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় বেহুশ হয়ে পড়ে যান। এরপর আল্লাহ তা’য়ালা তার তওবা কবুল করেন। লোকজন যখন তার তওবা কবুল হয়েছে বলে তাকে জানালেন, তখন তিনি বললেন : আল্লাহর কসম ! আমি নিজেকে কখনো মুক্ত করবো না, কেবল আল্লাহর রাসূলই সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে মুক্ত করবেন। অতঃপর, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করলেন ও তার জিঞ্জির খুলে দিলেন। (দেখুন : ইবনে আসীরের উসদুল গাবা : ৬/২৬১ ও ইমাম যাহাবীর তারীখে ইসলাম : ১/৩৪৩ পৃঃ এবং বাংলা সোনালী ফায়সালা : ৫৮ নং পৃ )। এই ছিল অতীতকালের মুসলমানদের সোনালী চিত্র।
আর বর্তমান যুগের মুসলমানগণ?
- – তারা অনেকেই ভীরু, কাপুরুষত্ব ও খারাপ আচরণে ভরপুর।
- – ইবাদত-বন্দেগীতে অলস হয়ে অনেকেই শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
- অনেকেই এমন আছে যারা কুরআন ও সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে বিভিন্ন ফিক্হী ও মাযহাবী কিছু কিতাব ও অন্যান্য এরকম পুস্তকে বর্ণিত মাসয়ালা-মসায়েলের প্রতি আমল করে থাকে এবং মাযহাবের ইমামদের কথাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে, যদিও তা সহীহ হাদীসের বিরোধী হয়ে যায়।
- আবার অনেকে আছে, যারা পীর, অলি-আউলিয়া, সাধু-সন্ন্যাসীর বয়ানকেই ইসলামের বাণী হিসেবে মনে করে থাকে।
- আবার কেউবা তাদের নির্বাচিত কোন নেতা কর্তৃক তৈরিকৃত কিছু পুস্তকের প্রচার ও প্রসারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে থাকে, যদিও সে গুলিতে ভুল থাকে না কেন।
- আবার অনেকে আছে যারা গান, বাজনা, নায়ক-নায়িকা বাছাই এবং কে কত বেহায়াপনা হয়ে বেরাতে পারে তার প্রতিযোগিতা করছে।
- তাদের অনেকের স্ত্রী, মা-বোন ও মেয়েরা বেপর্দা, উলঙ্গ, অর্ধ উলঙ্গ, নির্লজ্জ ও নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশায় গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে চলা-ফেরা করছে। ফলে সমাজে জেনা, ব্যভিচার, এসিড নিক্ষেপ ও যৌন হয়রানির মতো নানাবিধ অপরাধ দেখা দিচ্ছে।
- আবার কেউ সামান্য অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে দ্বিধা বোধ করছে না।
- আবার অনেকেই মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ ও লটারি খেলার কাজে লিপ্ত থাকছে।
- আবার অনেকে ইসলামকে সন্ত্রাসী ও বিপর্যয়কারী জঙ্গিবাদের মতো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করছে, অথচ ইসলাম এসব অপকর্ম থেকে মহা পবিত্র। এই হল মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা যা অত্যন্ত দুঃখ জনক।
পরিশেষে বলব, মুসলিম মিল্লাত যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের প্রকৃত মাবুদ আল্লাহ তায়ালাকে ভালভাবে চিনবে না, ইসলামী শরীয়তের দিকে ফিরে আসবে না এবং সোনালী যুগের সাহাবী ও তাঁদের উত্তম উত্তরসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের পূর্বের জায়গায় ফিরে আসতে সক্ষম হবে না এবং অতীত ও বর্তমান যুগের মুসলমানদের এই ব্যবধানও দূর হবে না। যেমন, উমর ফারুক রা. বলেছিলেন : “ ইসলাম পূর্বে আমরা একটি অপরিচিত ও নিচু মানের জাতি ছিলাম, কিন্তু যখন আমরা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিলাম, তখন আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে অনেক মান-মর্যাদা, সম্মান ও ইজ্জত দান করলেন। কিন্তু আমরা যদি এই ইসলামকে ছেড়ে দেই, তাহলে আমাদের আবার পূর্বের অবস্থা হতে পারে”। বর্তমানে যার অনেকটাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তাই, মুসলিম মিল্লাত যদি তার হারানো গৌরব, মান-মর্যাদা, সম্মান-ইজ্জত পুণরুদ্ধার ও অর্জন করতে চায়, তাহলে তাদেরকে আবারও বীরের মতো জাগ্রত হতে হবে, আল্লাহকে ভয় করতে হবে এবং কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক সঠিক দ্বীনে ইসলামকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে, যেভাবে সাহাবায়ে কিরাম রা. গণ তা শক্ত হাতে ধারণ করেছিলেন, তবেই মুসলমানদের বিজয় সুনিশ্চিত।
মহান আল্লাহর কাছে কামনা করছি, হে আল্লাহ তুমি মুসলিম মিল্লাতের হারানো সেই সোনালী গৌরবকে আবার ফিরিয়ে দাও! আমীন। কারণ তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান তোমাকে কেউ পরাস্ত করতে পারে না।
তাই, মুসলিম মিল্লাত যদি তার হারানো গৌরব, মান-মর্যাদা, সম্মান-ইজ্জত পুণরুদ্ধার ও অর্জন করতে চায়, তাহলে তাদেরকে আবারও বীরের মতো জাগ্রত হতে হবে, আল্লাহকে ভয় করতে হবে এবং কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক সঠিক দ্বীনে ইসলামকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে, যেভাবে সাহাবায়ে কিরাম রা. গণ তা শক্ত হাতে ধারণ করেছিলেন, তবেই মুসলমানদের বিজয় সুনিশ্চিত।
মহান আল্লাহর কাছে কামনা করছি, হে আল্লাহ তুমি মুসলিম মিল্লাতের হারানো সেই সোনালী গৌরবকে আবার ফিরিয়ে দাও! আমীন। কারণ তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান তোমাকে কেউ পরাস্ত করতে পারে না।
ওয়া সাল্লাল্লাহু আ’লা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ অআ’লা আলিহী অসাহবিহী আযমাঈন।
লেখক: আব্দুল হামীদ বিন সিদ্দীক হুসাইন।
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।
দাঈ ও গবেষক, দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, খামিস মোশাইত, সৌদি আরব।
No comments:
Post a Comment