Wednesday, June 27, 2018

সুরা ফাতিহা শেষে আমিন স্বশব্দে না নিরবে বলতে হবে? পক্ষে -বিপক্ষে পর্যালোচনা!!

সুরা ফাতিহা শেষে আমিন স্বশব্দে না নিরবে বলতে হবে? পক্ষে -বিপক্ষে পর্যালোচনা!!##ফাতিহা পাঠ শেষে “আমীন” কিভাবে বলতে হবে? স্বশব্দে না নিঃশব্দে বলতে হবে উভয় দলীল ও মুহাদ্দিস ও বিশিষ্ট আলেম গণের মন্তব্যঃ পর্ব-১ ধারাবাহিক ভাবে৩ পর্বে চলবে- কোন রেফারেন্স ভূল হলে ধরিয়ে দিন তাছাড়া নিজস্ব কোন মন্তব্য গ্রহণ যোগ্য নয়।
##আমীন অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি কবুল কর।
বিগত দিনে শুনে আসছি রাসূল প্রথম দিকে আমীন জোরে বলতেন পরে তা মানসুখ হয়ে গেছে কারণ ইসলামের প্রথমদিকে নও মুসলিমরা রাসূল (ছাঃ)এর পিছনে জিহাদের ময়দানে সালাত আদায়ের সময় ‘আমীন’ জোরে বলেছেন কারণ
পিছন থেকে সালাতের মধ্যে জিহাদের ময়দান থেকে গোপনে কেউ পালিয়ে গেল কি না তা রাসূল জানতে পারবেন এজন্য। কিন্তু প্রকৃত সহীহ হাদীসের চর্চা করতে এসে জানতে পেরেছি যে, উত্তরটা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন। আমাদের মসজিদ গুলোতে এখনও এই সকল ভিত্তিহীন বানোয়াটী কাহিনী চালু আছে, সালাতে কেউ স্বশব্দে বা সরবে (জোরে) ‘আমীন’ বলে তাহলে কেউ কেউ বিরক্ত প্রকাশ করে এবং হিংসা করে ভৎর্সনার চোঁখে দেখে।
রাসূল(ছাঃ) বলেন,
‘ইহুদিরা তোমাদের সবচে বেশি হিংসা করে ‘সালাম’ ও ‘আমীন’ এর কারণে’।
(আহাম্মদ, ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬, ছহীহ আত তারগীব হা/৫১২)।
অজ্ঞতা আর হাদীস ও হাদীসের সনদ ও মতন সম্মন্ধে জ্ঞান শুন্যতার কারণে আমরা এরকম করে থাকি।
##**নাফে বলেন, ইবনু ওমার (রাঃ) কখনো ‘আমীন’ বলা ছাড়তেন না এবং তিনি এ ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহ দিতেন। আত্বা বলেন, আব্দুলাহ বিন যুবায়ের (রাঃ) ‘আমীন’ বলতেন। তাঁর সাথে মুক্তাদিদের আওয়াজে মসজিদ গুঞ্জরিত হয়ে উঠত।(বুখারী, তা‘লীক ১/১০৭,পৃষ্ঠাঃ বুখারী হা/৭৮০, ফাৎহুল বারী হা/৭৮০,৭৮১)।
####চলুন মূল আলোচনায়ঃ
জেহেরী সালাতে মুক্তাদী স্বশব্দে আমীন বলবে কিনা সে বিষয়ে আমাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
##প্রথম মতঃ যদি ইমাম আমীন বলতে ভুলে যান তবে মুক্তাদী স্বশব্দে আমীন বলবে। যদি নিজেই উচ্চস্বরে আমীন বলেন, তবে ‘নতুন কথা’ মতে মুক্তাদী স্বশব্দে আমীন বলবে না। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) এর এটাই মত। ইমাম মালিক হতেও এরূপ বর্ণনা রয়েছে। কেননা সালাতে অন্যান্য যিকরের মত এটাও একটি যিকর। সুতরাং অন্যান্য যিকর যেমন উচ্চশব্দে পড়া হয় না, তেমন এটাও উচ্চ শব্দে পড়া হবে না।
##দ্বিতীয় মতঃ পূর্ব যুগের মনীষিদের কথা এই যে, আমীন উচ্চ শব্দে পড়া যায়। ইমাম আহমাদের এটাই মত। এবং দ্বিতীয় বর্ণনা অনুসারে ইমাম মালিকেরও এটাই মত। এর দলীল হিসাবে হাদীস আমীনের শব্দে মসজিদের মধ্যে গুঞ্জন ধ্বনীর রব উঠতো।
##তৃতীয় মতঃ যদি মসজিদ ছোট হয় তবে মুক্তাদী স্বশব্দে আমীন বলবে না। কেননা তারা ইমামের ক্বিরা’আত শুনছে। আর যদি মসজিদ বড় হয় তবে স্বশব্দে আমীন বলবে। যেন মসজিদের প্রান্তে প্রান্তে আমীনের শব্দ পৌছে যায় (আল্লাহই বেশি অবগত)। (তাফসীরে ইবনে ক্বাসীর, বঙ্গঃ ১২০ পৃষ্ঠা)।
অন্য একটি বর্ণনায় ইমাম আবূ হানীফার নামে মত প্রকাশ করতে যেয়ে বলা হয়েছেঃ
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেন, সালাতে সুরা ফাতিহা তেলাওয়াত করার পর ‘আমীন’ আস্তে বা জোরে বলা উভয়ই যায়েজ। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মতে ‘আমীন’ আস্তে বলা উত্তম, কেননা হাদীসে আছে (দলীল)ঃ
(১) আলক্বামা ইবনে ওয়াইল (র) তার পিতা ওয়াইল বিন হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) গাইরীল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্বলিন তিলাওয়াত করার পর ‘আমীন’ বললেন এবং তিনি তা আস্তে (নিম্নস্বরে) বললেন। (হাদীসটি ‘মুযত্বারীব’ হা/ তিরমীযি, ফিঃ হাঃ ইঃ ও দর্শন গ্রন্থ থেকে)।
##১৭টি হাদীসের মধ্যে আস্তে ‘আমীন’ বলার পক্ষে এই একটি হাদীস। হাদীসটি এসেছে এরকম, শোবা (রহঃ) এই হাদীসটি সালামা ইবনে কুহায়ল হুজর আবুল আম্বাস আলকামা ইবনে ওয়াইল তার পিতা ওয়াইল (রাঃ) এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, **রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘গাইরিল মাগদ্বূবী আলাইহিম ওয়ালাদ্দলীন’ পাঠের পর صوته بها أخفي أو جفض অর্থাৎ নিম্ন স্বরে ‘আমীন’ বলেছেন। (হাদীসটি মুযতারীব)।
(তিরমিযী বঙ্গানুবাদ-২৪৯), (আহাম্মদ ও দারকুৎনী তে এসেছে হা/১২৫৬ এর ভাষ্য)।
কিন্তু একই বর্ণনায় সুফিয়ান ছাওরী (রাঃ) বলছে ‘আমীন’ ته صو بها رفع অর্থাৎ উচ্চস্বরে বলেছেন। (আহাম্মদ দারকুৎনী হা/১২৫৬, নায়লুল আওতার ৩য় খন্ড ৭৫ পৃষ্ঠা)।
হাদীসের বিশ্লেষনকারীরা বলছেন নিম্ন স্বরে আমীন বলার হাদীসটি “মুযতারিব” (যে হাদীস গ্রহনযোগ্য নয়) যার সনদ মতনে নাম ও শব্দগত ভুল থাকার কারণে ‘যঈফ’। পক্ষান্তরে সুফিয়ান ছাওরী (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি এসব ত্রুটি মুক্ত হওয়ায় সহীহ।
বর্ণনাটি সম্বন্ধে তিরমিযী (রহঃ) বলেন, মুহাম্মদকে (ইমাম বুখারীকে) বলতে শুনেছি যে, সুফিয়ানের বর্ণনা শো‘বার চেয়ে অধিক সহীহ। এই বর্ণনায় শো‘বা অনেক জায়গায় ভুল করেছে। সে বর্ণনা করেছে হুজুর আবুল আনবাস থেকে। অথচ তিনি হলেন হুজুর বিন আনবাস। তার উপাধী হলো আবু সাকান। সে বৃদ্ধি করেছে আলকামা বিন ওয়ায়েল অথচ তাতে আলকামা নেই। মূলত তা হবে, ওয়ায়েল বিন হুজর থেকে হুজর বিন আনবাস। এছাড়া সে বলেছে, ‘তিনি নিম্নস্বরে বলেন’। অথচ তা হবে ‘তিনি তার স্বর উচ্চ করেন’।
(তিরমিযী ১/৫৮ পৃষ্ঠা)।
ইমাম তিরমিযী আরও বলেন, এই হাদীস সম্পর্কে আমি আবু যুর’আকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি উত্তরে বললেন, শো‘বার হাদীসের চেয়ে সুফিয়ানের বর্ণিত হাদীস অধিকতর সহীহ। (ঐ হা/২৪৮ এর শেষাংশ)।
#শু’বাহর ভুলঃ
শু’বাহর প্রথম ভুল এই যে, তিনি হুজরকে আমবাসের পিতা বলে উলেখ করেছেন। প্রকৃত কথা এই যে, হুজর আমবাসের পিতা নন, পুত্র। আর তার কুনিয়াত হচ্ছে আবু সাকান। (তিরমিযী আহমদী ছাপা ৪৯ পৃষ্ঠা)।
##ও তাঁর দ্বিতীয় ভ্রান্তি এই যে, এই হাদীসের সানাদে আলকামা বিন ওয়ায়েলকে অতিরিক্ত আমদানী করা হয়েছে। অথচ এর আসল সনদে তাঁর উল্লেখ নাই।
তাঁর তৃতীয় ভুল এই যে, হাদীসের মতনে তিনি যেখানে বলেন- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমীন শব্দটি আস্তে বললেন প্রকৃত পক্ষে তা হবে যে, তিনি আমীন সশব্দে উচ্চারণ করলেন।
##স্বয়ং মোল্লা আলী কারী হানাফী তদীয় মিশকাতের শরাহ মিরকাতে অকুন্ঠ ভাষায় স্বীকার করেছেন যে, হাদীসবিদগণ শু’বার এই ভুল সম্পর্কে একমত। তিনি বলেন, সর্বস্বীকৃত সঠিক কথা হচ্ছে ‘মাদ্দাবিহা সাওতাহু ও রাফা’আ বেহা সাওতাহু’ অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)আমীনের শব্দ দারাজ কন্ঠে পড়লেন এবং উচ্চকন্ঠে পড়লেন। লম্বা করে টেনে পড়ার কথা তিরমিযী, আহমাদ ও ইবনু আবী শায়বা রিওয়ায়াত করেছেন আর উচ্চকন্ঠে পড়ার কথা আবু দাউদ রিওয়ায়াত করেছেন। এতদ্ব্যতীত বায়হাক্বী তদীয় হাদীস গ্রন্থে ও ইবনু হিব্বান স্বীয় সহীতে ‘আত্বার বাচনিক রিওয়ায়াত করেছেন যে, তিনি বলেন, “আমি সাহাবীগণের মধ্যে এমন দু’শত জনকে পেয়েছি যারা ইমাম ওয়াযযাললীন বলার পর বুলন্দ আওয়াজে আমীন বলতেন”।
শু’বাহর হাদীস যে যঈফ সে সম্পর্কে তাঁর উপরোল্লিখিত ৩টি ভ্রান্তি এবং মোল্লা আলী কারীর উপরোদ্ধৃত মন্তব্যের পর কোনই সন্দেহ থাকতে পারে না। এর উপর তার বর্নিত সনদে দেখা যায়, আলকামা তদীয় পিতা ওয়ায়েল হতে এই হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু মজার কথা এই যে, তিনি তাঁর পিতার নিকট এই হাদীস শুনেননি-শুনতে পারেন না। এ সম্পর্কে হাফিয ইবনু হাজার তদীয় ‘তকরীবুত তাহযীব’ নামক রিজাল শাস্ত্রের গ্রন্থে কি বলেন- পাঠক মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করুন! তিনি বলেন, ‘আলকামাহ বিন ওয়ায়েল বিন হুজর- (পেশযুক্ত হা ও সাকিনযুক্ত জীম) হাজরামী কুফী (রাবী হিসাবে) সত্যবাদী (সন্দেহ নাই) কিন্তু নিশ্চিত কথা এই যে, তিনি তাঁর পিতা হতে হাদীস শ্রবন করেননি। পিতার নিকট হতে পুত্র কোন হাদীস শ্রবন করতে পারেননি সে কথার রহস্য উদঘাটন করে দিয়েছেন শায়খ ইবনু হুমাম হানাফী স্বীয় ফাতহুল কাদীর গ্রন্থে। তিনি ওটাতে লিখেছেন ঃ অর্থাৎ ইমাম তিরমিযী স্বীয় ইলালে কবীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ইমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আলকামা স্বীয় পিতার নিকট হাদীস শ্রবন করেছিলেন? তদুত্তরে ইমাম বুখারী (হাঁ, না কিছুই না বলে বললেন) তিনি (আলকামা) স্বীয় পিতার মৃত্যুর ৬ মাস পর জন্মগ্রহন করেন।
(ফাতহুল কাদীর, নলকিশোর ছাপা ১ম খন্ড ১২১ পৃষ্ঠা)।
অতএব এজন্য হাদীসটি দ্বারা দ্বীনি আমলের দলীল সাব্যস্ত হতে পারে না
##হযরত ওমর (রা.) বলেন, চারটি বিষয় ইমাম অনুচ্চস্বরে পাঠ করবে : আউযু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও আল্লাহুম্মা রাববানা ওয়া লাকাল হামদ।
أربع يخفيهن الإمام : التعوذ وبسم الله الرحمن الرحيم وآمين واللهم ربنا ولك الحمد
(ইবনে জারীর, কানযুল উম্মাল ৮/২৭৪; বিনায়াহ ২/২১৯)
জবাবঃ এই হাদিসটি মুনকাতি হওয়ার কারণে যঈফ। কারণ হাদিসটি ইব্রাহিম নাখয়ী বর্ণনা করেছেন উমার (রা.) হতে। আর ইব্রাহিম নাখয়ী উমার রা. কে পান নাই।
এছাড়া আরো একটি বর্ণনা রয়েছে আবদুর রহমান বিন আবী লায়লা হতে উমার বিন খাত্তাব রা. এর বর্ণনা। সেটিও মুনকাতি। কারণ আবদুর রহমান বিন আবী লায়লাও উমার বিন খাত্তাব রা. কে পান নাই। (তাহযিবুত তাহযিব)। সুতরাং হাদিসটি দলিলযোগ্যও নয়, প্রমাণিতও নয়।
#২য় দলিলঃ আবু ওয়াইল (রাহ.) বলেন, খলীফায়ে রাশেদ আলী রা. ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বিসমিল্লাহ উঁচু আওয়াজে পড়তেন না। তেমনি আউযুবিল্লাহ ও আমীনও।
كان علي وعبد الله لا يجهران ببسم الله الرحمن الرحيم ولا بالتعوذ، ولا بالتأمين، قال الهيثمي : رواه الطبراني في الكبير وفيه أبو سعد البقال، وهو ثقة مدلس.
আলমুজামুল কাবীর, হাদীস : ৯৪০৪; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১০৮)
জবাবঃ হাদিসটি যঈফ। কারণ হাদিসটির সানাদে রয়েছেন, আবু সাঈদ বিন আল মারযাবান আল বাকাল। ইমাম বুখারী বলেন, তিনি মুনকারুল হাদিস; ইমাম আমর বিন আলী বলেন, তিনি মাতরুকুল হাদিস; ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি মাতরুক; ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি যঈফ; ইমাম ইজলী বলেন, তিনি যঈফ; ইমাম আবু হাতেম বলেন, তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নন। এছাড়াও আরো অনেকেই এই রাবীর সমালোচনা করেছেন (তাহযিবুত তাহযিব)। এছাড়া আবু সাঈদ বিন আল মারযাবান আল বাকাল মুদাল্লিস এবং মুদাল্লিস রাবীর (বর্ণনাকারীর) আন শব্দে বর্ণিত হাদিস দলিল হিসেবে অগ্রহণযোগ্য। হাদিসটি যঈফ হওয়ার এটিও অন্যতম কারণ।
মোট কথা জমহুর মুহাদ্দিসিনের নিকট তিনি যঈফ। তাই দলিলটি অগ্রহণযোগ্য। অথচ হানাফীরা এসব অগ্রহণযোগ্য যঈফ হাদিসই দলিল হিসেবে দিয়ে থাকে নিজেদের মাযহাবী মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আর মুকাল্লিদরা সেগুলো প্রচার করে এবং নিজেদের হুজুরদের আকড়ে ধরে অন্ধের মতো।
##৩য় দলিলঃ আবু ওয়াইল থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর (রা.) ও হযরত আলী (রা.) বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়তেন না।
لم يكن عمر وعلي يجهران بسم الله الرحمن الرحيم ولا بآمين.
(ইবনে জারীর তবারী ; আলজাওহারুন নকী ১/১৩০
জবাবঃ এই হাদিসটিও যঈফ। কারণ হাদিসটির সানাদে রয়েছেন, আবু সাঈদ বিন আল মারযাবান আল বাকাল। ইমাম বুখারী বলেন, তিনি মুনকারুল হাদিস; ইমাম আমর বিন আলী বলেন, তিনি মাতরুকুল হাদিস; ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি মাতরুক; ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি যঈফ; ইমাম ইজলী বলেন, তিনি যঈফ; ইমাম আবু হাতেম বলেন, তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নন। এছাড়াও আরো অনেকেই এই রাবীর সমালোচনা করেছেন (তাহযিবুত তাহযিব)। এছাড়া আবু সাঈদ বিন আল মারযাবান আল বাকাল মুদাল্লিস এবং মুদাল্লিস রাবীর (বর্ণনাকারীর) আন শব্দে বর্ণিত হাদিস দলিল হিসেবে অগ্রহণযোগ্য। হাদিসটি যঈফ হওয়ার এটিও অন্যতম কারণ।
মোট কথা জমহুর মুহাদ্দিসিনের নিকট তিনি যঈফ। তাই দলিলটি অগ্রহণযোগ্য। অথচ হানাফীরা এসব অগ্রহণযোগ্য যঈফ হাদিসই দলিল হিসেবে দিয়ে থাকে নিজেদের মাযহাবী মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আর মুকাল্লিদরা সেগুলো প্রচার করে এবং নিজেদের হুজুরদের আকড়ে ধরে অন্ধের মতো।
##৪র্থ দলিলঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ইমাম তিনটি বিষয় অনুচ্চস্বরে পড়বে : আউযুবিল্লাহ …, বিসমিল্লাহ … ও আমীন।
يخفي الإمام ثلاثا : الاستعاذة وبسم الله الرحمن الرحيم وآمين.
(আলমুহাল্লা ৩/১৮৪)
জবাবঃ হাদিসটির সম্পূর্ণ সানাদ নিম্নে দেওয়া হলো
আবী হামজা =< ইব্রাহিম নাখয়ী =< আলকামাহ ও আসওয়াদ =< আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ
عن أبي حمزة عن إبراهيم النخعي عن علقمة ، والأسود ، كلاهما عن عبد الله بن مسعود قال : يخفي الإمام ثلاثا – : الاستعاذة ، وبسم الله الرحمن الرحيم ، وآمين
উপরোক্ত হাদিসটি যঈফ। কারণ সানাদে রয়েছেন “আবী হামজা মায়মুনা” তিনি মাতরুকুল হাদিস অর্থাৎ হাদিসের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য। ইনি মারাত্মক দুর্বল। এমন হাদিস যে, হানাফীরা কিভাবে দলিল হিসেবে দেয়, তা আল্লাহই ভালো জানেন। এদের আল্লাহর ভয় আছে কি না সন্দেহ। এছাড়া হানাফীরা দলিল না পেয়ে আস্তে আমিন বলার পক্ষে ইব্রাহিম নাখয়ীর “নিজস্ব” মন্তব্য দলিল হিসেবে দিয়েছেন যা খন্ডন করার কোনোই প্রয়োজন নাই।
আবু হুরায়ারা(রাঃ)থেকে বর্ণিত যে,রাসূল(ছাঃ) বলেন অতিশীঘ্রই আমার উন্শতের মধ্যে এমন লোক(পয়দা)হবে যারা পীর মৌলভীদের দিকে ডাকবে,আর তারা তাদের কথা মত আমল করবে; আর মুসলমানদের ইমামের পিছনে উচ্চৈঃস্বরে ‘আমীন’বললে এমন ভাবে হিংসা করবে যেমন ভাবে ইয়াহুদীরা হিংসা করে।খবরদার এরাই হল আমার এই উন্মতের ইহাহুদি,করে। খবরদার এরাই হল আমার এই উন্মতের ইহাহুদি, করে।খবরদার এরাই হল আমার এই উন্মতের ইহাহুদি,খবরদার এরাই হল আমার এই উন্মতের ইহাহুদি(ইবনুস সাকান,ইবনুল কাত্তান)
রাসূল()সূরা ফাতিহা শেষ করার পর “আমীন”জোরে বলতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদেরকেও জোরে বলার হুকুম দিতেন।অর্থাৎ রাসূল ()বলতেন এবং বলতে হুকুম দিতেন।রাসূল (ছাঃ)এর কোন দ্বিনী কাজ আল্লাহর হুকুম ছাড়া হতোনা তা আল কুর‘আনে ষ্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে।রাসূল(ছাঃ)বলেছেন ‘নিশ্চইয় ‘আমীন’ আল্লাহ আমাকে দান করেছেন এবং তা বলার বা বলানোর হুকুম দিয়েছেন।(ইবনে কাসির)
আমীন শব্দের অর্থ= এ ভাবেই কর।এভাবেই হোক।অল্লাহ্ তায়ালার নামের মধ্যে একটি নাম।‘আমীন’ পরোয়ার দেগারের মহর।যা লেখনির শেষে হতে হয়,দোয়ার শেষে বলা হয়।‘আমীন’জান্নাতের দরজা।
ين المتد لايحب انه وجفية عا تضر عواربكم اد
##“তোমরা বিনীতভাবে ও সংগোপনে তোমাদের রবের কাছেই প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না”। (সূরা আরাফ আয়াত-৫৫)।
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিরবে-নিঃশব্দে ও সংগোপনে বিনয়াবনত হয়ে দু‘আ করার নির্দেশ দান করেছেন। অতএব দু‘আ করতে হবে কাকুতি-মিনতি ভাবে ও গোপনে। এটাই সত্য।
অনেকে আমীন আস্তে বলার জন্য এই দলীল পেশ করেছেন- জ্বী হ্যাঁ আমাদের মনে রাখতে হবে,কুর‘আনের আয়াত দুনিয়ার সব মানুষের চেয়ে বেশী যিনি বুঝতেন তিনি মুহম্মাদুর রাসুলুল্লাহ(ছাঃ)-এ আয়াতে কুর‘আনে থাকতে দেখা যায় রাসূল(ছাঃ) বহু দোয়া জোরে জোরে পড়েছেন,সূরা ফতিহা সহ অনেক দোয়া!উচ্চৈঃস্বরে কাফেরদের বদদোয়া করেছিলেন (মুসলিম ১/৩৩১পৃঃ)কবরের আযাব থেকে পানাহ চেয়েছেন (বোখারী ১/১৮৪পৃঃ)ইস্তেস্কার দোয়া জোরে জোরে পড়েছেন।তাই কুর‘আনের সাধারণ অর্থ আমাদের বুঝে আসলেও রাসূল(ছাঃ) যেটা করেছেন এবং করতে বলেছেন সেটাই আমাদের করতে হবে।তিনি যেখানে আস্তে পড়েছেন আমরাও সেখানে আস্তে পড়বো।যেখানে জোরে পড়েছে আমরাও জোরে পড়বো।কারণ তিনিই হচ্চেন আমাদের উত্তম অনুসরণীয় ব্যক্তি।
কিন্ত অবাক হতে হয় তখন!যারা আমীন আস্তে বলার পক্ষে বিভিন্ন দলীল পেশ করে তারাই ধর্মীয় সভা,খুৎবা ও অন্যান্য খাস জায়গায় মাইক সাউন্ড বক্স দিয়ে জোরে জোরে দোয়া করে এবং সাথে সাথে জন সাধারণ ও জোরে জোরে ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে থাকে।সেখানে নিজেদের যুক্তি নিজেরাই মানেনা। তথা কথিত আলেমদের সমস্যাও হয়না।
মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে বইটিতে ২৯৭ -৩১২ পৃষ্ঠায় নানা কৌশলে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে তা এবং মুখরোচক কিছু গল্প আমীন আস্তে বলার দলীল হিসেবে মানুষ মনে করে এবং প্রচার হয়ে গেছে। অনেকে বলেন, রাসূল(ছাঃ)ভিন্ন আমলও করেছেন। তবে রাসূল(ছাঃ)ভিন্ন আমল করলে সে কথাও হাদীসে পাওয়া যায়। অতএব এ রকম সন্দেহ আর অনুমানে থাকা মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেওয়া একই কথা।
কতিপয় সাহাবী ও তাবেঈর নামে কিছু আছার বর্ণিত হয়েছে, যেগুলো তাহাভী ১/৯৯ পৃষ্ঠা; মুসান্নাফ আঃ রায্যাক ২/৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/৮৯৪১; মাজমাউয যাওয়েদ ১/১৮৫ পৃষ্ঠা; কানযুল উম্মাল ৪/২৪৯; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে পৃষ্ঠা নং-৩১৯ এবং বাজারে বিভিন্ন নামায শিক্ষা বই গুলোতে পাওয়া যায়। সেগুলো যঈফ। (জাল হাদিসের কবলে রাসূল (ছাঃ) এর ছালাত।)
ফাতিহা পাঠ শেষে “আমীন” কিভাবে বলতে হবে? স্বশব্দে না নিঃশব্দে বলতে হবে উভয় দলীল ও মুহাদ্দিস ও বিশিষ্ট আলেম গণের মন্তব্যঃ পর্ব-২ ধারাবাহিক ভাবে৩ পর্বে চলবে- কোন রেফারেন্স ভূল হলে ধরিয়ে দিন তাছাড়া নিজস্ব কোন মন্তব্য গ্রহণ যোগ্য নয়।
##চলুন এবার জেনে নিই হাদীসে আমীন বলার সুস্পষ্ট দলীলঃ
বুখারী (রহঃ)“ইমামের উচ্চস্বরে আমীন বলা”অনুচ্ছেদ এবং“মুক্তাদীর উচ্চস্বরে আমীন বলা” অনুচ্ছেদ তার বুখারী শরীফে এনেছেন। (বুখারী ১ম খন্ড পৃষ্ঠা-১০৭/৮)।
তাছাড়া মারফু হাদীসের মোকাবেলায় মাওকুফ হাদীস দলীল সাব্যস্তে ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য নয়। যা হোক, ১৭টি হাদীস ‘আমীন’ বলার পক্ষে এসেছে।(আর রাওয়াতুন নাদিইয়াহ-১/২৭১)।
স্বশব্দে আমীন বলার হাদীসগুলো নিম্নরূপ ঃ
১। বুখারী ১ম খন্ড ১০৮ পৃষ্ঠা, ২। মুসলিম ১ম খন্ড ১৭৬ পৃষ্ঠা, ৩। আবূ দাউদ ১ম খন্ড ১৩৪ পৃষ্ঠা, ৪। তিরমিযী ১ম খন্ড ১৫৬ পৃষ্ঠা, ৫। নাসাঈ ১ম খন্ড ১৪৭ পৃষ্ঠা, ৬। ইবনে মাজাহ ১ম খন্ড ৬২ পৃষ্ঠা, ৭। মুয়াত্তা মালিক ৩০ পৃষ্ঠা, ১৪০ পৃষ্ঠায় ইঃ ফাঃ, ৮। দারকুতনী ১২৭ পৃষ্ঠা, ৯। বায়হাক্বী ২য় খন্ড ৫৯ পৃষ্ঠা, ১০। ফাতহুল বারী ২য় খন্ড ২১৭ পৃষ্ঠা, ১১। নায়লুল আওত্বার ২য় খন্ড ২৪৪ পৃষ্ঠা, ১২। আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১ম খন্ড ২৩৬ পৃষ্ঠা, ১৩। সুবুলুস সালাম ১ম খন্ড ২৪৩ পৃষ্ঠা, ১৪। তুহফাতুল আহওয়াযী ১ম খন্ড ১০৮ পৃষ্ঠা, ১৫। তালখীসুল হাবীর ১ম খন্ড ৯০ পৃষ্ঠা, ১৬। আকামুল আহ্কামুল ১ম খন্ড ২০৭ পৃষ্ঠা।
##
মুক্তাদীদের আমীন বলা ঃ
আমীন (آمينْ) -এর উপরে ‘মাদ্দ’ বা খাড়া যবর দু’টিই পড়া যায়েজ।
(সহীহ আত তারগীব হা/৫১১, হাসিয়া, আলবানী ১ম খন্ড ২৭৮ পৃষ্ঠা)।
১। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ইহুদীরা তোমাদের প্রতি তিনটি বিষয়ে এতটা হিংসা করে, যা অন্য বিষয়ে করে না। ১)— ২)— ৩) ইমামের পিছনে আমাদের আমীন বলা।
(আহমাদ, ইবনে মাজাহ, সহীহ আত-তারগীব, ইবনে কাসীর ১/১১৯ বঙ্গানুবাদ পৃষ্ঠা)।
হযরত আলী (রাঃ), হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) প্রমূখ সাহাবীগণ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে রাসূল (ছাঃ) এর স্বশব্দ আমীন তার নিকটবর্তী প্রথম সারির লোকেরা স্পষ্টতই শুনতে পেতেন। (ইবনে মাজাহ, আবূ দাউদ, ইবনে কাসীর ১/১১৯ পৃষ্ঠা, বঙ্গানুবাদ)।
২। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন তিলাওয়াতকারী (ইমাম) আমীন বলেন তখন তোমরাও আমীন বল। কেননা ফেরেশতাগণও আমীন বলে থাকেন। আর যার আমীন ফেরেশতাদের আমীন বলার মত হয় তার পূর্ববর্তী পাপ মার্জনা করে দেওয়া হয়।
(মুত্তাফাক্ব আলাইহি, মিশকাত হা/৮২৫)।
৩। আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন রাসূলে পাক (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, কুর‘আন’ পাঠকারী ইমাম যখন ‘গাইরিল মাগদ্বূবী আলাইহিম ওয়ালাদ্দলীন’ বলবেন এবং তার পিছনের মুক্তাদী ‘আমীন’ বলবে। আর তার বাক্য আসমান বাসী ফিরেশতাদের বাক্যের অনুরুপ একই সময় উচ্চারিত হবে, তখন তার পূর্বেকার যাবতীয় গুনাহ মর্জিত হয়ে যাবে।
(বুখারী ১০৮ পৃষ্ঠা, অনুরূপ মুসলিম হা/৮০৬, অনুরুপ হা/৮০১,৮০৩,৮০৪,৮০৫ বঙ্গানুবাদ, তিরমীযি বঙ্গানুবাদ হা/-২৫০)।
ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী বলেন, এটি সহীহ্।
৪। ‘আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, সালাতে ইমাম যখন ‘গাইরিল মাগদ্বূবী আলাইহিম ওয়ালাদ্দলীন’ পাঠ করবে, তখন তোমরা সবাই আমীন বলবে। যেহেতু ফেরেশতাদের কথার সাথে যার কথার সাদৃশ্য হবে, তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ইবনু শিহাব বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমীন বলতেন।
(বুখারী হা/-৭৮০,মুসলিম হা/-৬১৮, তিরমীযি হা/-২৩২, নাসাঈ হা/-৯১৮, আবু দাউদ হা/-৮০১, ইবনু মাজাহ হা/-৮৪১)।
##ইমামদের উচ্চস্বরে আমীন বলতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলতেনঃ
৫। ওয়াইল ইবনে হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) ‘গাইরিল মাগদ্বূবী আলাইহিম ওয়ালাদ্দলীন’ পাঠ করার পর জোরে “আমীন” বলতেন। (আবু দাউদ হা/-৯৩২ সহীহ সনদে)।
৬। একজন মহিলা সাহাবী উম্মু হুসাইন (রাঃ) নবী (ছাঃ) -এর পিছনে মেয়েদের কাতারে সালাত কায়েম করতেন। তিনি বলেন যে, নাবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ওয়ালাদ্দলীন পাঠান্তে আমীন বলতেন। তখন আমি পিছনে মেয়েদের কাতার হতে শুনেছি।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ১ম খন্ড ২০ পৃষ্ঠা, তালিকুল মুমাজ্জাদ ১০৫ পৃষ্ঠা)।
৭। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) যখন ‘গাইরিল মাগদ্বূবী আলাইহিম ওয়ালাদ্দলীন’ পড়তেন তখন এমনভাবে আমীন বলতেন যে, যারা প্রথম কাতারে তারা তা শুনতেন।
(আবূ দাউদ ১৩৫ পৃষ্ঠা)।
৮। ‘হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কে ‘গাইরিল মাগদ্বূবী আলাইহিম ওয়ালাদ্দলীন’ পাঠের পর ‘আমীন’ বলতে শুনেছি। আর দীর্ঘস্বরে তা পাঠ করেছেন”।
(তিরমিযী-২৪৮ বঙ্গানুবাদ)।
একাধীক সাহাবা, তাবেঈ ও পরবর্তী যুগের উলামাগণ এই মত ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেছেন নীরবে না বলে ‘আমীন’ উচ্চস্বরে বলতে হবে। ঈমাম শাফিই, আহমাদ ও ইসাহাক (রঃ) প্রমুখের অভিমত এটাই।
এই সকল হাদীস সমূহে প্রমানিত হয় যে ইমাম (সশব্দে) আমীন বলবে, মুক্তাদী শুনবে সঙ্গে সঙ্গে মুক্তাদীগণ (সশব্দে) আমীন বলবে। যদি ইমাম সরবে ‘আমীন’ না বলে তাহলেও মুক্তাদী সরবে ‘আমীন’ বলবে।
(সহীহ ইবনু খুযয়মা হা/৫৭৫ অনুচ্ছেদ-১৩৯)।
৮। ‘হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর চাচাত ভাই হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘গাইরিল মাগদ্বূবী আলাইহিম ওয়ালাদ্দলীন’ পাঠের পর এমন জোরে ‘আমীন’ বলতেন যে,প্রথম কাতারের তার নিকটবর্তী লোকেরা এই শব্দ শুনতে পেত।(আবু দাউদ-৯৩৪ বঙ্গানুবাদ)।
##ফাতিহা পাঠ শেষে “আমীন” কিভাবে বলতে হবে? স্বশব্দে না নিঃশব্দে বলতে হবে উভয় দলীল ও মুহাদ্দিস ও বিশিষ্ট আলেম গণের মন্তব্যঃ
প্রখ্যাত আলেমদের মতামতঃ
১। ইমাম আবূ হানীফার উস্তাদ আত্বা ইবনে রেবাহ তাবেঈ বলেন, আমি এই মসজিদুল হারামে ক্বাবা শরীফে ২০০ সাহাবীকে এমন অবস্থায় পেয়েছি যে, ইমাম ওলায যলিন বলে, তখন আমি তাঁদের আমীনের প্রতিধ্বনি শুনেছি।(বায়হাক্বী ২/৫৯;আইনী৬/৪৮;ফাতহুল বারী ২/২৬৭;ইবনে হিব্বান ১৮৯ পৃষ্ঠা)।
২। আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী বলেন, নিরবে আমীন বলার প্রমানে কোনো মওকুফ হাদীসও পাওয়া যায় না। (তোহফাতুল আহওয়াযী ১/২০৯)।
তাছাড়া জোরে আমীন বলার বিরুদ্ধেও কোনো সাহাবীর কোনো ফতওয়া পাওয়া যায় না। সুতরাং এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম উচ্চস্বরে আমীন বলতেন।
(সালাতুল মুস্তফা ১/১১০ পৃষ্ঠা)।
৩। ইমাম শাওকানী (রহঃ) ১৭টি হাদীস ও ৩টি আছার বর্ণনা করে প্রমাণ করেন, আমীন উচ্চস্বরে বলতে হবে। (নায়লুল আওত্বার ২/১১৫)।
৪। প্রকাশ্যে আমীন বলার হাদীস সাবেত আছে।(আইনুল হিদায়া ১/৩৬৫,নুরুল হিদায়া ৯৭)।
৫।মুক্তাদীগণ ইমামের আমীন শুনে আমীন বলবে।(দুররে মুখতার,গাইতুল আওত্বার১/২২৯)।
৬। দুই একজন শুনলে তাকে জেহেরী বলা হয় না বরং সকল লোককে শুনতে হবে।
(গাইতুল আওত্বার ১/২৪৯, হাকিকাতুল ফিকাহ ১৮৮ পৃষ্ঠা)।
৭।আল্লামা আব্দুল হাই লখনভী (রহঃ) হানাফী বলেন, সরব কিরআতে জোরে আমীন বলতে হবে।
(ফাতাহুল ক্বাদীর)
৮।একই বক্ত্যব্য ইবনে আমিরুল হাজ্জ (রহঃ) হানাফী
{শরহে মুনিয্যাতুল মুসাল্লী(শারহ আকায়াহ পৃঃ১৪৬সহ টিকা।)}
৯। ইমাম মোহাম্মদ শাইবানী(রহঃ) হানাফী (মায়াত্তা মুহাম্মদ পৃঃ১৫)
১০।আবুল হাসান সিন্ধি(রহঃ)হানাফী(ইবনে মাজহার টীকা পৃঃ১৪৫)
১১। ইমাম ইবনু হুমাম হানাফী আস্তে আমীন বলার হাদীসকে যঈফ বলে এই ফায়সালা করেছেন যে, আমীন দরিমিয়ানী (মাঝামঝি) আওয়াজে বলতে হবে। (ফাতাহুল ক্বাদীর, আয়নুল হিদায়া ১/৩৬৩)।
১২। মুজাদ্দিদে আল ফি সানী (রহঃ) শায়খ আহমদ শার হিন্দী (রহঃ) উচ্চস্বরে আমীন বলার হাদীস সমূহ বেশি এবং অতিশুদ্ধ। (আবকারুল মিনান পৃষ্ঠা-১৮৯)
১৩। শায়খ আব্দুল হাক্ব মুহাদ্দীস দেহলভী হানাফী (রহঃ) তার মাদারিজুন নব্যুয়া গ্রন্থে ২০১ পৃষ্ঠায় এবং আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) তার ত্বালীকুল মুমাজ্জাদ গ্রন্থে ১০৩ পৃষ্ঠায় বলেছেন দলীলের ভিত্তিতে সলাতে জোরে আমীন বলাটাই সুন্নাত সম্মত।
গভীর চিন্তা গবেষনার পর আমরা উচ্চৈঃস্বরে ‘আমীন’ বলাকেই অতি সঠিক পেলাম। কেননা এটা নাবী থেকে বণিত রিওয়ায়াতের সাথে মিলে। আর নিম্ন স্বরে ‘আমীন’ বলার রিওয়ায়াত গুলো দুর্বল তাই উচ্চৈঃস্বরে বলার রিওয়ায়াতের সমকক্ষতা করতে পারবে না।’’ (আস সিআয়া ১/১৩৬)
১৪। (বড়পীর খ্যাত) আঃ কাদের জ্বিলানী জোরে আমীন বলার পক্ষপাতী ছিলেন।
(গুনিয়াতুত তালেবীন ১১ পৃষ্ঠা)।
১৫। শাহ ওয়ালিউলাহ মুহাদ্দিস দেহলভী জোরে আমীন বলতেন। (তানবীরুল আইলয়েন ৪১ পৃষ্ঠা)।
১৬। সালাতে ইমামের শব্দ করার অবস্থানের মধ্যে একটি হল, আমীন জোরে বলবে।
(কুরআন সুন্নার আলোকে ইসলামি ফিকাহ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম আত তুয়াইজিরী ২/১৮ পৃষ্ঠা)।
১৭। আলবানী (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ(ছাঃ) জোরে আমীন বলতেন, তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
(রাসূলুলাহর নামায পৃষ্ঠা-৬৮)।
১৮। শায়খ আব্দুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে বায (রহঃ) সাবেক সৌদি ফতওয়া বোর্ড প্রধান বলেন, উচ্চ আওয়াজের সলাতে আওয়াজ করে এবং চুপিসারে সলাতে চুপি চুপি আমীন বলবে।
(নামায পড়ার পদ্ধতি বঙ্গঃ পৃষ্ঠা-৭)।
১৯। ইমাম আমীন বলা শুরু করলে মুক্তাদীরা আমীন বলবে। যাতে করে ইমাম মুক্তাদীর আমীন ও ফেরেশতাদের আমীন একসঙ্গে হয়। অন্যথা আমীন বলার ফযিলত বঞ্চিত হবে।
(সৌদি ফতওয়া বোর্ড প্রধান এর ফতওয়া উসাইমিন ১৩/৭৮ পৃষ্ঠা)।
তিরি আরও বলেন, আমীন বলা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। (ফতওয়ায়ে আরকানুল ইসলাম ২৬৮ পৃষ্ঠা বঙ্গ:)।
২০। বাংলাদেশের হানাফী মাযহাবের অন্যতম প্রখ্যাত আলিম আল্লামা শামসুল হাক্ব ফরীদপুরী (সদর সাহেব হুজুর (রহঃ) স্বীয় ওয়াসিয়্যাত নামায় লিখেছেনঃ হানাফী মাযহাবের কোন ব্যক্তি যদি জোরে আমীন বলে এবং ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে তাহলে তার হানাফীয়াত টুটে যাবে না বরং আরো মজবুত হবে। (তার ওয়াসিয়্যাত নামার ৭নং ওয়াসিয়্যাত )।
পিস টিভির আলোচক স্কলার শায়খ গন সকলেই স্বশব্দে আমীন বলার পক্ষে সর্বসম্মত মত প্রকাশ করেন।
জোরে আমীন না বললেও সালাত হয়ে যাবে কিন্তু একটি সুন্নাত কমে যাবে অর্থাৎ রাসূল যেভাবে সালাত আদায় করেছেন সেভাবে হবে না।
##সর্বশেষ কথাঃ
অমাদের সমাজে যখন ওয়াজ মাহফিল করা হয়। ফরয সালাত শেষে সন্মিলীত মেনাজাত(বি‘দআত) করা হয় তখন জেরে জোরে অমীন বললে তথা কথিত আলেমদের সমস্যা নেই।কিন্তু ফাতিহা পাঠ শেষে আমীন জোরে বলা সুন্নাত সেটাতে আপত্তি ও যুক্তিরও শেষ নেই।
কোর‘অনের আয়াতের ব্যাখাও হাজির করে মনে হয় রাসূল্লাহ (ছাঃ)-এর চেয়ে ব্যখাটা ওনারা বেশী বুঝে ফেলেছেন! যেখানে সহীহ সুত্রে আসা তার বাণী বলছে তিনি এই সময় জোরে অমীন বলতেন। সেখানে কেন যুক্তির প্রয়োজন নেই।
মুওত্বা, বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, তিরমীযি, আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ, দ্বারকুৎনী, ইবনু মাজাহ, আত তারগীব সহ সমস্ত হাদীস গ্রন্থে ‘আমীন’ বলা অধ্যায়ে বর্ণিত যে, জেহেরী সলাতে, জেহেরী রাক’আতে (সরবে) সশব্দে ‘আমীন’ বলতে হবে। এমন কোন হাদীস পাওয়া যায় না যেখানে মনে, মনে ‘আমীন’ বলতে হবে। যেমন আমাদের হানাফী মাযহাবের নামে এই মাযহাব অনুসারিত ইমামগণ করেন।
সেজন্য জেহেরী সালাতে যেহেতু শব্দ করে ক্বিরআত পাঠ করা হয়, অনুরুপ ‘স্বশব্দে আমীন’ বলতে হবে। এবং সিররী সালাতে নিঃশব্দে কিরা’আত পাঠ করা হয়, সেহেতু (অনুরুপ শব্দে) নিঃশব্দে আমীন বলতে হবে আর এই নিয়মই নবী (ছাঃ) এর সুন্নাত।
আবু হুরায়রা (রাঃ) মারওয়ান ইবনুল হাকামের আযান দিতেন। …… মারওয়ান ‘আলাদ দলীন’ বলতেন তখন আবু হুরায়রা (রাঃ) দীর্ঘ আওয়াজে ‘আমীন’ বলতেন। তিনি আরো বলেনঃ যদি যমীন বাসীর আমীন আসমান বাসীর আমীনের সাথে মিলে যায় তাহলে তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
(বায়হাকী ২/৫৯ সহিহ্ সনদ)।
উল্লেখ্য আবু হুরায়রার উচ্চস্বরে আমীন বলার বিপরীতে অন্য কোন সাহাবীর হতে ভিন্ন মত পাওয়া যায় না। এছাড়াও এ বিষয়ে সহীহ সনদে অনেকগুলো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আত্বা বলেন ইবনুল যুবায়ের উম্মুল কুরআন পড়ার পর ‘আমীন’ বলতেন এবং তার পিছনের ব্যক্তিরাও আমীন বলতেন। এমনকি মসজিদ কেঁপে উঠতো, অতঃপর আমীন হচ্ছে দো‘আ। (মুসান্নাফ ইবনু আব্দুর রায্যাক নং-২৬৪০ খন্ড-২)।
এছাড়াও আবু হুরায়রা ও ইবনুয যুবায়ের (রাঃ) হতে উচ্চ আওয়াজে (স্বশব্দে) আমীন বলার সহীহ সনদে সঠিক হাদীস সাব্যস্ত হয়েছে, এমনকি মসজিদ কেঁপে উঠত। যা পূর্ববর্তি হাদীসও আছারে অবগত হয়েছেন। অন্য কোন সাহাবা হতে তাদের বিপরীতে কোন সিদ্ধান্ত বর্ণিত হয়নি।
মনে মনে আমীন বলার কোন হাদীস নেই এবং আস্তে বলার হাদীসটিও মুল মতনের সঙ্গে কোন মিল নেই। যার কারণে ঐ হাদীস গ্রহনযোগ্য নয়। জোরে স্বশব্দে আমীন বলার বিপক্ষে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না।
অনেকে বলে থাকেন আমীন আস্তে বা জোরে বললে কোন দোষ তো নেই। সঠিকটা হল এই যে, রাসূল (ছাঃ) যেভাবে সালাত আদায় করেছেন, তেমনই তার উম্মতদের বলেছেন। আর যারা বলেন, রাসূল (ছাঃ) কোন কোন সময় অবস্থা বুঝে কোন সময় আমীন জোরে বলেছেন, কোন সময় আস্তে বলেছেন। এসব বানোয়াটী, ভিত্তিহীন। আমীন আস্তে বলার যে বর্ণনা তা (মুযতারিব, ভ্রান্ত অগ্রহনযোগ্য)।

No comments:

Post a Comment

প্রশ্ন: সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যদি কেউ সারা জীবন সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতি নেয়ার পর তার জন্য করণীয় কি?

প্রশ্ন: সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যদি কেউ সারা জীবন সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতি নেয়...