কাফেরদেরকে বলে যে, এরামুসলমানদের তুলনায় অধিকতরসরল সঠিক পথে রয়েছে”। (নিসাঃ৫১)আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন, “বলো, [হে মুহাম্মদ] আমি কি সে সবলোকদের কথা জানিয়ে দেবো? যাদের পরিণতি আল্লাহর কাছে [ফাসেক লোকদেরপরিণতি] এর চেয়ে খারাপ। তারা
এমন লোক যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন এবং যাদেরউপর আল্লাহর গজব নিপতিত হয়েছে। যাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে তিনি বানর ও শুকরবানিয়ে দিয়েছেন। তারা তাগুতের পূজা করেছে”। (মায়েদাঃ ৬০) আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে এরশাদ করেছেন, “যারা তাঁদের ব্যাপারে বিজয়ী হলো তারাবলল, আমরা অবশ্যই তাদের উপর [অর্থাৎ কবরস্থানে] মসজিদ তৈরী করব” (কাহাফ: ২১)[ তাফসীর ইবন কাসীর অনুসারে এ আয়াতের ব্যাখাঃ এখন ঐ এলাকার লোকদের ইচ্ছা হলোযে, গুহাবাসীদের গুহার মুখ বন্ধ করে দেয়া হোক এবং তাঁদেরকে তাঁদের অবস্থার উপরছেড়ে দেয়া হোক। কাজের উপর যাদের প্রাধান্য ছিল তারা বললো, “আমরা তাদের আশেপাশে মসজিদ নির্মাণ করবো”। ইমাম ইবনু জারীর রাহিমাহুল্লাহ ঐ লোকদের ব্যাপারে দুটিউক্তি বর্ণনা করেছেন, একটি এই যে, তাদের মধ্যে মুসলমানেরা এ কথা বলেছিল, আরদ্বিতীয় উক্তিটি হচ্ছে যে, ঐ উক্তিটি ছিল কাফিরদের। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তায়ালাইসবচেয়ে ভালো জানেন। কিন্তু বাহ্যতঃ এটাই জানা যাচ্ছে যে, এই উক্তিকারীরা ছিল মুসলমান।তবে তাদের একথা বলা ভাল ছিল্ কি মন্দ ছিল সেটা অন্য কথা। এই ব্যাপারে পরিষ্কার হাদীসেবর্ণণা রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ তায়ালাইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের উপর লানত বর্ষণ করুন যে, তারা তাদের নবী ও ওয়ালীদেরকবরগুলিকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে”। তারা যা করতো তা থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় উম্মাতকে বাঁচাতে চাইতেন। এজন্যেই আমিরুল মুমিনিন উমার ইবনুখাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় খিলাফতের যমানায় যখন ইরাকে হযরত দানিইয়ালের(রাদিয়াল্লাহুআনহু)কবরের সন্ধান পান, তখন তা গোপন করে দেয়ার নির্দেশ দেন এবং যে লিপি প্রাপ্তহন, যাতে কোন কোন যুদ্ধ ইত্যাদির বর্ণনা ছিল, তা পুঁতে ফেলার আদেশ করেন ] সাহাবী আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদকরেছেন, “আমি আশঙ্কা করছি “তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেররীতি-নীতি অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করবে [যা আদৌ করা উচিত নয়] এমনকি তারা যদি গুঁইসাপের গর্তেও ঢুকে যায়, তোমরাও তাতে ঢুকবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন,‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, তারা কি ইহুদি ও খ্রিস্টান?’ জবাবে তিনি বললেন, তারা ছাড়া আর কে? (বুখারী ওমুসলিম) মুসলিম শরীফে সাহাবী ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তাআলা গোটা যমীনকে একত্রিত করে আমার সামনেপেশ করলেন। তখন আমি জমিনের পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত দেখে নিলাম। পৃথিবীরততটুকু স্থান আমাকে দেখানো হয়েছে আমার উম্মতের শাসন বা রাজত্ব যতটুকু স্থানপর্যন্ত বিস্তার লাভ করবে। লাল ও সাদা দুটি ধন ভান্ডার আমাকে দেয়া হলো আমি আমার রবেরকাছে আমার উম্মতের জন্য এ আরজ করলাম, তিনি যেন আমার উম্মতকে গণ দুর্ভিক্ষেরমাধ্যমে ধ্বংস না করেন এবং তাদের নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কোন শত্রুকে তাদেরউপর বিজয়ী বা ক্ষমতাসীন করে না দেন যার ফলে সে (শত্রু) তাদের সম্পদকে হালালমনে করবে [লুটে নিবে]।আমার রব আমাকে বললেন, হে মুহাম্মদ আমি যখন কোন বিষয়ে ফয়সালা নিয়ে ফেলি, তখনতার কোন ব্যতিক্রম হয় না। আমি তোমাকে তোমার উম্মতের জন্য এ অনুগ্রহেরপ্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আমি তাদের গণ দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে ধ্বংস করব না এবং তাদেরনিজেদেরকে ছাড়া যদি সারা বিশ্ব ও তাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয় তবুও এমন কোন শত্রুকেতাদের উপর ক্ষমতাবান করব না যা তাদের সম্পদকে বৈধ মনে করে লুন্ঠন করে নিয়েযাবে যে পর্যন্ত না তারা একে অপরকে ধ্বংস করবে আর একে অপরকে বন্দীকরবে”।বারকানী তাঁর সহীহ হাদিস গ্রন্থে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে উক্ত বর্ণনায়নিম্নোক্ত কথাগুলো অতিরিক্ত এসেছে, “আমি আমার উম্মতের জন্য পথভ্রষ্ট শাসকদেরব্যাপারে বেশি আশঙ্কা বোধ করছি। একবার যদি তাদের উপর তলোয়ার উঠে তবে সেতলোয়ার কেয়ামত পর্যন্ত আর নামবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে নাযতক্ষণ না আমার একদল উম্মত মুশরিকদের সাথে মিলিত হবে এবং যতক্ষণ না আমার উম্মতেরএকটি শ্রেণী মূর্তি পূজা করবে। আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী অর্থাৎ ভন্ডনবীর আবির্ভাব হবে। প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবি করবে। অথচ আমিই হচ্ছিসর্বশেষ নবী। আমার পর কোন নবীর আগমন ঘটবে না। কেয়ামত পর্যন্ত আমারউম্মতের মধ্যে এমন একটি সাহায্য প্রাপ্ত দলের অস্তিত্ব থাকবে যাদেরকে কোনঅপমানকারীর অপমান ক্ষতি করতে পারবে না। [অর্থাৎ সত্য পথ থেকে বিরত রাখতেপারবে না]ব্যাখ্যা:মুসলিম উম্মহার কিছু সংখ্যক লোক মূর্তিপূজা করবে, এ অধ্যায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে শিরকেরব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং শিরককে ভয় করে চলা। উম্মতে মুসলিমা শিরকে পতিতহওয়ার বিষয়টি বাস্তব ও অবধারিত।এর আরো একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ ব্যক্তির জবাব দেয়া, যে এ কথা দাবি করে যে, যেব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে মুসলিম নাম ধারণ করল সে ইসলামের পরিপন্থী কাজ করেওইসলামের উপর টিকে থাকতে পারে। ইসলাম পরিপন্থী উক্ত কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে,কবরবাসীদের কাছে সাহায্য চাওয়া, তাদের কাছে দোয়া করা এবং এটাকে ইবাদতেরপরিবর্তে অসীলা নামে অবিহিত করা। তাদের এ দাবি সম্পূর্ণ বাতিল।“ওয়াছান”: অর্থাৎ মূর্তি এমন ব্যাপক অর্থবোধক নাম যা দ্বারা আল্লাহ ব্যতীত যাবতীয়উপাস্যকে বুঝানো হয়। এ ক্ষেত্রে গাছ, পাথর, বাড়ি-ঘর, এবং আম্বিয়া, আউলিয়া, নেককার ওবদকারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। [অর্থাৎ গাইরুল্লাহ, নেককার, বদকার কিংবা গাছ-পাথর যাইহোক না কেন তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া আর দোয়া করা সর্বাবস্থাতেই] এটা তাদের ইবাদতকরার শামিল যা কেবলমাত্র একক আল্লাহর প্রাপ্য। যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর কাছে দোয়া করলঅথবা তার ইবাদত করল সে ব্যক্তি তাকে [গাইরুলাহকে] উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করল। এবংসাথে সাথে গাইরুল্লাহর ইবাদতের কারণে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেলো। ইসলামেরসাথে এমতাবস্থায় তার সম্পর্কের কোন মূল্যই হবে না। এমন বহু মুশরিক মুলহিদ, কাফির এবংমুনাফেকের সম্পর্কই তো ইসলামের সাথে ছিল। এখানে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে দ্বীনেরমূল শিক্ষা এবং তার মর্মার্থ। অর্থহীন নাম আর শব্দ এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়।__________________________________________“কিতাবুত তাওহীদ’ বইটির এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ১। সূরা নিসার ৫১নং আয়াতের তাফসীর।২। সূরা মায়েদার ৬০ নং আয়াতের তাফসীর।৩। সূরা কাহাফের ২১ নং আয়াতের তাফসীর।৪। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। [আর তা হচ্ছে] এখানে ‘জিবত] এবং ‘তাগুতের] প্রতিঈমানের অর্থ কি? এটা কি শুধু অন্তরের বিশ্বাসের নাম? নাকি জিবত ও তাগুতের প্রতিঘৃণা,ক্ষোভ এবং বাতিল বলে জানা সত্ত্বেও এর পূজারীদের সাথে ঐকমত্য পোষণ করাবুঝায়?৫। তাগুত পূজারীদের কথা হচ্ছে, কাফেররা তাদের কুফরি সম্পর্কে অবগত হওয়া সত্ত্বেওতারা মোমিনদের চেয়ে অধিক সত্য পথের অধিকারী।৬। আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে যে ধরনের লোকের কথা উল্লেখ করাহয়েছে সে ধরনের বহু সংখ্যক লোক এ উম্মতের মধ্যে অবশ্যই পাওয়া যাবে। [যারা ইহুদিখৃষ্টানদের হুবহু অনুসারী]।৭। এ রকম সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরসুস্পষ্ট ঘোষণা। অর্থাৎ এ উম্মতে মুসলিমার মধ্যে বহু মূর্তি পূজারী লোক পাওয়া যাবে।৮। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, “মুখতারের” মত মিথ্যা এবং ভন্ড নবীর আবির্ভাব।মুখতার নামক এ ভন্ডনবী আল্লাহর একত্ববাদ ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাইহিওয়া সাল্লাম এর রিসালতকে স্বীকার করতো। সে নিজেকে উম্মতে মুহাম্মদীরঅন্তর্ভূক্ত বলেও ঘোষণা করতো সে আরো ঘোষণা দিতো, রাসূল সত্য, কুরআন সত্যএবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী হিসেবেস্বীকৃত। এগুলোর স্বীকৃতি প্রদান সত্বেও তার মধ্যে উপরোক্ত স্বীকৃতির সুস্পষ্টবিপরীত ও পরিপন্থী কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ভন্ড মুর্খও সাহাবায়ে কেরামেরশেষ যুগে আবির্ভূত হয়েছিল এবং বেশ কিছ ু লোক তার অনুসারীও হয়েছিল।৯। সুসংবাদ হচ্ছে এই যে, অতীতের মতো হক সম্পূর্ণরূপে কখনো বিলুপ্ত হবে না বরংএকটি দল হকের উপর চিরদিনই প্রতিষ্ঠিত থাকবে।১০। এর সবচেয়ে বড় নিদর্শন হচ্ছে, তারা [হক পন্থীরা] সংখ্যায় কম হলেও কোনঅপমানকারী ও বিরোধীতাকারী তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।১১। কেয়ামত পর্যন্ত উক্ত শতর্ কার্যকর থাকবে।১২। এ অধ্যায়ে কতগুলো বড় নিদর্শনের উলেখ− রয়েছে।যথাঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সংবাদ পরিবেশন যে, ‘আল্লাহতাআলা তাঁকে বিশ্বের পূবর্ ও পশ্চিম দিগন্তের সবকিছুই একত্রিত করে দেখিয়েছেন। এসংবাদ দ্বারা যে অথর্ বুঝিয়েছেন বাস্তবে ঠিক তাই সংঘটিত হয়েছে, যা উত্তর ও দক্ষিণেরব্যাপারে ঘটেনি। তাঁকে দু’টি ধন-ভান্ডার প্রদান করা হয়েছে এ সংবাদও তিনি দিয়েছেন। তাঁরউম্মতের ব্যাপারে মাত্র দুটি দোয়া কবুল হওয়ার সংবাদ তিনি দিয়েছেন এবং তৃতীয় দোয়াকবুল না হওয়ার খবরও তিনি জানিয়েছেন। তিনি এ খবরও জানিয়েছেন যে, এ উম্মতেরউপরে একবার তলোয়ার উঠলে তা আর খাপে প্রবেশ করবে না। [অর্থাৎ সংঘাত শুরু হলে তাআর থামবে না]।তিনি আরো জানিয়েছেন যে, উম্মতের লোকেরা একে অপরকে ধ্বংস করবে, একেঅপরকে বন্দী করবে। উম্মতের জন্য তিনি ভ্রান্ত শাসকদের ব্যাপারে শতর্কবাণীউচ্ছারণ করেছেন। এ উম্মতের মধ্য থেকে মিথ্যা ও ভন্ড নবী আবির্ভাবের কথা তিনিজানিয়েছেন। সাহায্য প্রাপ্ত একটি হক পন্থীদল সব সময়ই বিদ্যমান থাকার সংবাদ জানিয়েছেন।উল্লেখিত সব বিষয়ই পরিবেশিত খবর অনুযায়ী হুবহু সংঘটিত হয়েছে।মূলঃ কিতাবুত তাওহীদ, অধ্যায় ২৩
No comments:
Post a Comment