Wednesday, June 27, 2018

সালাম কি শুধু আলেম-ওলামা, মুরুব্বীরা, শিক্ষক-ওস্তাদ, পিতামাতা ও শ্বশুর-শ্বাশুড়িরাই পাবে? ছোটরাই কি শুধু বড়দের সালাম দিবে?

সালাম কি শুধু আলেম-ওলামা, মুরুব্বীরা, শিক্ষক-ওস্তাদ, পিতামাতা ও শ্বশুর-শ্বাশুড়িরাই পাবে? ছোটরাই কি শুধু বড়দের সালাম দিবে?
প্রথম ভাগঃ ইসলামিক অভিবাদন ও এর ক্ষেত্র
بِسْمِ اللَّهِ، إِنَّ الْحَمْدَ لِلّٰهِ‎، وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ،
বিসমিল্লা-হি, ইন্নালহামদুলিল্লাহ, ওয়াসসালাতু, ওয়াসসালা-মু, ‘আলা রাসূলিল্লা-হি। [আল্লাহ্‌র নামে (শুরু করছি), নিশ্চয়ই; সকল প্রশংসার আল্লাহর জন্য, শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহ্‌র রাসুলের উপর]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সা:) কে জিজ্ঞাসা করে: ইসলামের কোন আদর্শটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন: তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দিবে।” [বুখারী হাদিস নম্বর ১২ শব্দগুলি তার ও মুসলিম হাদিস নম্বর ৩৯]
আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন
: ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, মু’মিন না হওয়া পর্যন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তোমরা মু’মিন হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিসের কথা বলব না, যা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করবে? নিজেদের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন করো।” [ছহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৫৪]
১. সালামের পদ্ধতিঃ
আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন,
وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا
“তোমাদেরকে যখন সালাম দেয়া হয় তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম জবাব দাও অথবা তারই অনুরূপ জবাব দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।” [কুরআন মাজীদ, সূরা আন-নিসা (নারী), সূরা নম্বর ৪, আয়াত নম্বর ৮৬, মদীনায় অবতীর্ণ]
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি নবী (সা:)-এর নিকট এসে বলল: “আস্সালামু ‘আলাইকুম” তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন, অত:পর সে বসে গেল, তারপর নবী (সা:) বলেন: “দশ” (নেকি)। অত:পর অন্য একজন এসে বললো: আস-সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” তিনি তার উত্তর দিলেন. সে বসে গেল, নবী (সা:) বললেন: “বিশ” (নেকি) অত:পর আরো একজন এসে বললো: আস-সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ” তিনি তারও উত্তর দিলেন, সে বসে গেল, অত:পর তিনি বললেন: “ত্রিশ” (নেকি)। [কুরআন মাজীদ, হাদীস সহীহ, আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ৫১৯৫ ও তিরমিযী, হাদিস নম্বর ২৬৮৯]
২. প্রথমে সালাম প্রদানকারীর ফজিলতঃ
আবু আইয়ূব আল-আনসারী (রা:) হতে বর্ণিত, নবী (সা:) বলেন: তিন রাত্রের অধিক কোন মুসলমানের জন্য তার ভাই থেকে (কথা না বলে) পথৃক থাকা জায়েজ নয়। তাদের উভয়ের (চলা-ফেরায়) সাক্ষাত ঘটে কিন্তু এও তার থেকে বিমখু হয় সেও তার থেকে বিমখু হয়। প্রকৃতপক্ষে তাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি হলো, যে প্রথমে সালাম প্রদান করবে।” [ছহীহ বুখারী, হাদিস নম্বর ৬০৭৭ ও ছহীহ মুসলিম হাদিস নম্বর ২৫৬০ শব্দগুলি তার]
আবু উমামাহ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ (সা:) বলেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে প্রথমে সালাম প্রদান করে।” [হাদীসটি সহীহ, আবু দাউদ হাদিস নম্বর ৫১৯৭ শব্দগুলি তার ও তিরমিযী হাদিস নম্বর ২৬৯৪]
৩. প্রথমে কে সালাম প্রদান করবেঃ
আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি নবী (সা:) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “ছোট বড় কে, চলমান ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম প্রদান করবে।” [ছহীহ বুখারী, হাদিস নম্বর ৬০৭৭ ও মুসলিম হাঃ নং ২৫৬০ শব্দগুলি তার।)
আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “আরোহী ব্যক্তি পদাতিক ব্যক্তিকে, পদাতিক ব্যক্তি উপবিষ্ট ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক বেশি সংখ্যককে সালাম প্রদান করবে।” [হাদীস সহীহ, আবু দাউদ হাদিস নম্বর ৫১৯৭ শব্দগুলি তার ও তিরমিযী হাদিস নম্বর ২৬৯৪]
৪. নারী ও শিশুদের প্রতি সালামঃ
আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী (সা:) আমাদের মহিলা সমাজের নিকট দিয়ে অতিবাহিত হওয়ার প্রাক্কালে আমাদের প্রতি সালাম প্রদান করেন।” [বুখারী হাদিস নম্বর ৬২৩১ ও মুসলিম হাদিস নম্বর ২১৬০]
আনাস ইবনে মালেক (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি [সা:] শিশুদের নিকট দিয়ে অতিবাহিত হওয়ার সময় তাদের প্রতি সালাম প্রদান করেন এবং বলেন: নবী (সা:) এরূপ করতেন। [ছহীহ বুখারী, হাদিস নম্বর ৬২৩২ ও ছহীহ মুসলিম হাদিস ২১৬০]
৫. ফেতনামুক্ত হলে নারীরা পুরুষকে সালাম প্রদান করতে পারবেঃ
উম্মে হানী বিনতে আবু তালেব (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি মক্কা বিজয়ের বছর রসূলুল্লাহ (সা:)-এর নিকট গেলাম তখন তাঁকে গোসল করা অবস্থায় পেলাম, আর তাঁর মেয়ে ফাতেমা তখন তাঁকে আড়াল করেছিল। অত:পর আমি তাঁকে সালাম প্রদান করলাম। তিনি বললেন: “কে এই মহিলা?” আমি বললাম: আমি উম্মে হানী বিনতে আবু তালেব। তারপর তিনি বললেন: “মারহাবা উম্মে হানী” (উম্মে হানীরকে স্বাগতম)।” [ছহীহ বুখারী, হাদিস নম্বর ৬১৫৮ শব্দগুলি তার ও মুসলিম নং ৩৩৬]
৬. গৃহে প্রবেশের সময় সালামঃ
আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, “যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম দাও। উত্তম দোয়া স্বরূপ, যা আল্লাহর নিকট হতে বরকতময় ও পবিত্র।” [কুরআন মাজীদ, সূরা আন-নূর (আলোক), সূরা নম্বর ২৪, আয়াত নম্বর ৬১, মদীনায় অবতীর্ণ]
আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।” [কুরআন মাজীদ, সূরা আন নুর (আলোক), সূরা নম্বর ২৪, আয়াত নম্বর ২৭, মদীনায় অবতীর্ণ]
৭. জিম্মীদেরকে সালাম না দেয়াঃ
আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা:) বলেন: তোমরা ইহুদি ও খ্রীস্টানদেরকে সালাম দিওনা। আর যখন তাদের কার সাথে কোন রাস্তায় সাক্ষাত হবে তখন তাকে সংকীর্ণ রাস্তাতে বাধ্য কর।” [ছহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ২১৬৭]
আনাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা:) বলেছেন: “যখন তোমাদেরকে আহলে কিতাব সালাম প্রদান করে উত্তরে তোমরা বলো: “ওয়া ‘আলাইকুম।” [ছহীহ বুখারী হাদিস ৬২৫৮ ও মুসলিম হাদিস নম্বর ২১৬৩]
৮. মুসলিম ও অমুসলিম মিশ্রিত সমাবেশ দিয়ে গমনকালে শুধু মুসলিমদের উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করাঃ
উসামা ইবনে জায়েদ (রা:) হতে বর্ণিত, নবী (সা:) সা‘দ ইবনে উবাদাহকে দেখতে আসেন (আর তার মধ্যে রয়েছে): যখন তিনি এমন এক সমাবেশ দিয়ে অতিবাহিত হন যাতে মুসলমান, পৌত্তলিক, ‘মুশরিক ও ইয়াহুদিদের সংমিশ্রণ ছিল, নবী (সা:) তাদের প্রতি সালাম প্রদান করলেন, অত:পর থেমে অবতরণ করেন এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত করেন ও তাদের প্রতি কুরআন তেলাওয়াত করেন।” [ছহীহ বুখারী হাদিস নম্বর ৫৬৬৩ ও মুসলিম হাদিস নম্বর ১৭৯৮ শব্দগুলি তার]
৯. আগমন ও প্রস্থানের সময় সালামঃ
আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন সমাবেশে উপস্থিত হবে, সে যেন সালাম প্রদান করে এবং যখন প্রস্থান করার ইচ্ছা করে তখনও যেন সালাম প্রদান করে, শেষবারের চেয়ে প্রথমবার সালাম প্রদান অগ্রাধিকার রাখে না। (বরং আগমন ও প্রস্থান উভয় সময়ে সালামের বিধান একই)।” [হাদীসটি হাসান, আবু দাউদ হাদিস নম্বর ৫২০৮ ও তিরমিযী হাদিস নম্বর ২৭০৬ দেখুনঃ সিলসিলা সহীহা হাদিস নম্বর ১৮৩]

No comments:

Post a Comment

প্রশ্ন: সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যদি কেউ সারা জীবন সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতি নেয়ার পর তার জন্য করণীয় কি?

প্রশ্ন: সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যদি কেউ সারা জীবন সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতি নেয়...