Wednesday, June 20, 2018

প্রশ্ন ডান হাতের সাহায্য নিয়ে বাম হাতে পান করা কি সুন্নত পরিপন্থী?

প্রশ্ন ডান হাতের সাহায্য নিয়ে বাম হাতে পান করা কি সুন্নত পরিপন্থী?
প্রশ্ন ডান হাতের সাহায্য নিয়ে বাম হাতে পান করা কি সুন্নত পরিপন্থী?
প্রশ্ন: আমার পরিচিত এক ভাইয়ের বাড়িতে প্রতি শুক্রবার আকিদার দরস হয়, তার দাওয়াতে সেখানে আমি অংশ গ্রহণ করি। খাবারের সময় আমাদের একজন বাম
হাতে গ্লাস নিয়ে ডান হাতের তালুর উল্টো পিঠে রেখে পানি পান করছিল,উপস্থিত একজন তাকে বাঁধা দিয়ে বলল:“না,এভাবে পানি পান করবেন না। ডান হাতেই পানি পান করুন, গ্লাসে খাবার লাগলে লাগুক”। এরকম ঘটনা আমার জীবনে এটাই প্রথম।
আমার জিজ্ঞাসা আমরা যে বাম হাতে গ্লাস বা পানির পাত্র তুলে ডান হাতের সাহায্যে পান করি, তা কি সুন্নতের খিলাফ, অথবা বাম হাতে খাওয়া শয়তানী কর্মের অন্তর্ভুক্ত? জানিয়ে বাধিত করবেন।
আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দিন।
উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ, হাদিসে স্পষ্টভাবে ডান হাতে পান করার নির্দেশ ও বাম হাতে পান করার নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
( ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻛَﻞَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻓَﻠْﻴَﺄْﻛُﻞْ ﺑِﻴَﻤِﻴﻨِﻪِ ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺷَﺮِﺏَ ﻓَﻠْﻴَﺸْﺮَﺏْ ﺑِﻴَﻤِﻴﻨِﻪِ ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺑِﺸِﻤَﺎﻟِﻪِ ، ﻭَﻳَﺸْﺮَﺏُ ﺑِﺸِﻤَﺎﻟِﻪِ ) .
“যখন তোমাদের কেউ খায় সে যেন ডান হাতে খায়, এবং যখন পান কর সে যেন ডান
হাতে পান করে। কারণ শয়তান তার বাম হাতে খায় ও বাম হাতে পান করে”।[1]
জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
” ﻟَﺎ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍ ﺑِﺎﻟﺸِّﻤَﺎﻝِ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺑِﺎﻟﺸِّﻤَﺎﻝِ “
“তোমরা বাম হাতে খেয়ো না, কারণ শয়তান বাম হাতে খায়”।[2]
ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে সালেম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
” ﻟَﺎ ﻳَﺄْﻛُﻠَﻦَّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺑِﺸِﻤَﺎﻟِﻪِ، ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺸْﺮَﺑَﻦَّ ﺑِﻬَﺎ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﻳَﺸْﺮَﺏُ ﺑِﻬَﺎ “ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﺯَﺍﺩَ ﻧَﺎﻓِﻊٌ : ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺄْﺧُﺬَﻥَّ ﺑِﻬَﺎ، ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻌْﻄِﻴَﻦَّ ﺑِﻬَﺎ “
“তোমাদের কেউ বাম হাতেবা খাবে না এবং তার দ্বারা পান করবে না, কারণ শয়তান তার
মাধ্যমে খায় ও পান করে”।
ওমর ইব্ন মুহাম্মদ বলেন: ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর অপর ছাত্র নাফে বাড়িয়ে বলেছেন: “… বাম হাতে ধরবে না এবং বাম হাত দ্বারা কাউকে দিবে না”।[3]
ইয়াস ইব্ন সালমা ইব্ন আকওয়া থেকে বর্ণিত, তার পিতা তাকে বলেছেন:
ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﺃَﻛَﻞَ ﻋِﻨْﺪَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﺸِﻤَﺎﻟِﻪِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ” ﻛُﻞْ ﺑِﻴَﻤِﻴﻨِﻚَ “ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻟَﺎ ﺃَﺳْﺘَﻄِﻴﻊُ، ﻗَﺎﻝَ : ” ﻟَﺎﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖَ ﻣَﺎ ﻣَﻨَﻌَﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﻜِﺒْﺮُ “ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻤَﺎ ﺭَﻓَﻌَﻬَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﻓِﻴﻪِ
জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তার বাম হাতে খেল, তিনি বললেন: “তোমার ডান হাতে খাও”। সে বলল: পারি না।তিনি বললেন: “তুমি কখনো পারবে না, অহংকার ব্যতীত কোন কারণ তাকে বাঁধা দেয়নি”। তিনি বলেন:সে তার ডান হাত কখনো মুখে তুলতে পারেনি।[4]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
“ ﻣَﻦْ ﺃَﻛَﻞَ ﺑِﺸِﻤَﺎﻟِﻪِ ﺃَﻛَﻞَ ﻣَﻌَﻪُ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ، ﻭَﻣَﻦْ ﺷَﺮِﺏَ ﺑِﺸِﻤَﺎﻟِﻪِ ﺷَﺮِﺏَ ﻣَﻌَﻪُ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ”
“যে তার বাম হাতে খায়, শয়তান তার সাথে খায়। আর যে তার বাম হাতে পান করে, শয়তান তার সাথে পান করে”।[5]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
” ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻳَﻤِﻴﻨَﻪُ ﻟِﻄَﻌَﺎﻣِﻪِ ﻭَﺷَﺮَﺍﺑِﻪِ ﻭَﺛِﻴَﺎﺑِﻪِ، ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞُ ﺷِﻤَﺎﻟَﻪُ ﻟِﻤَﺎ ﺳِﻮَﻯ ﺫَﻟِﻚَ “
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানা, পান করা ও পরিধানের জন্য তারডান হাত ব্যবহার করতেন,এ ছাড়া অন্যান্য কাজের জন্য তিনি তার বাম হাত ব্যবহার করতেন”[6]
#রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এসব নিষেধাজ্ঞা থেকে স্পষ্ট হয় যে, বাম
হাতে খাওয়া, পান করা ও আদান-প্রদান করা নিষেধ ও অবৈধ এবং শয়তানি কর্মের
অন্তর্ভুক্ত। শয়তানি কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন:
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮٓﺍْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﭐﻟۡﺨَﻤۡﺮُ ﻭَﭐﻟۡﻤَﻴۡﺴِﺮُ ﻭَﭐﻟۡﺄَﻧﺼَﺎﺏُ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺯۡﻟَٰﻢُ ﺭِﺟۡﺲٞ ﻣِّﻦۡ ﻋَﻤَﻞِ ﭐﻟﺸَّﻴۡﻄَٰﻦِ ﻓَﭑﺟۡﺘَﻨِﺒُﻮﻩُ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗُﻔۡﻠِﺤُﻮﻥَ ٩٠﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٩٠ ]
“হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা- বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও”।সূরা মায়েদা: (৯০)
ইব্নওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
” ﻣَﻦْ ﺗَﺸَﺒَّﻪَ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ “
“যে কোন সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখল, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত”।[7]
অতএব প্রমাণ হল বাম হাতে পান করা যাবে না, কারণ বাম হাতে পান করা শয়তানি কর্ম, আল্লাহ যা ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বাম হাতে পান করার
অর্থ শয়তানের দলভুক্ত হওয়া, আল্লাহ যার থেকে সর্তক করেছেন, কারণ শয়তান
আমাদের চিরশত্রু, সে তার দলকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান করে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﺸَّﻴۡﻄَٰﻦَ ﻟَﻜُﻢۡ ﻋَﺪُﻭّٞ ﻓَﭑﺗَّﺨِﺬُﻭﻩُ ﻋَﺪُﻭًّﺍۚ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﺪۡﻋُﻮﺍْ ﺣِﺰۡﺑَﻪُۥ ﻟِﻴَﻜُﻮﻧُﻮﺍْ ﻣِﻦۡ ﺃَﺻۡﺤَٰﺐِ ﭐﻟﺴَّﻌِﻴﺮِ ٦ ﴾ ‏[ ﻓﺎﻃﺮ : ٦ ]
“নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়”। [ সূরা ফাতের: ৬] হ্যাঁ কোন অপারগতা, হাতে জখম ও শরীয়ত অনুমোদিত কারণ থাকলে বাম হাতে পানাহার করা বৈধ। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
﴿ ﻭَﻗَﺪۡ ﻓَﺼَّﻞَ ﻟَﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢۡ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﭐﺿۡﻄُﺮِﺭۡﺗُﻢۡ ﺇِﻟَﻴۡﻪِۗ ١١٩ ‏[ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١١٩ ]
“অথচ তিনি তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, যা তোমাদের উপর হারাম করেছেন, তবে যার প্রতি তোমরা বাধ্য হয়েছ”।[8]
সুতরাং বাধ্য হয়ে বাম হাতে পান করা বৈধ।
উভয় হাতে পান করা: কতক বর্ণনা থেকে প্রমাণ হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় হাতে পানি পান করেছেন। যেমন ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ” ﺷَﺮِﺏَ ﻣِﻦْ ﺯَﻣْﺰَﻡَ ﻣِﻦْ ﺩَﻟْﻮٍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﺎﺋِﻢٌ “
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দণ্ডায়মান অবস্থায় যমযমে রাখা বালতি দ্বারা যমযমের পানি পান করেছেন”।[9]
আব্দুর রহমান ইব্ন আবু ওমর নিজ দাদীর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
( ﺩَﺧَﻞَ ﻋَﻠَﻲَّ ﺭَﺳُﻮﻝ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻭَﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖ ﻗِﺮْﺑَﺔ ﻣُﻌَﻠَّﻘَﺔ ﻓَﺸَﺮِﺏَ ﻗَﺎﺋِﻤًﺎ ﻓَﻘُﻤْﺖ ﺇِﻟَﻰ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻓَﻘَﻄَﻌْﺘﻪ ) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আগমন করেন, তখন বাড়িতে ঝুলন্ত [চামড়ার তৈরি]
পানির মশক ছিল, তিনি দণ্ডায়মান অবস্থায় পান করেন, অতঃপর আমি তার মুখ দেয়ার
জায়গা কেটে সংরক্ষণ করি”।[10]
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
… ﺛُﻢَّ ﺩَﻋَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﻘَﺪَﺡٍ ﻓَﺮَﻓَﻌَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻓَﺸَﺮِﺏَ ﻟِﻴَﺮَﻯ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﻴْﺲَ ﺑِﺼَﺎﺋِﻢٍ
… অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্র তলব করলেন, তিনি তা উভয় হাতের ওপরে রাখলেন ও পান করলেন, যেন মানুষেরা দেখে তিনি সিয়াম অবস্থায়
নেই”।[11]
আল্লাহ তা’আলার বাণী:
﴿ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻦِ ﭐﻏۡﺘَﺮَﻑَ ﻏُﺮۡﻓَﺔَۢ ﺑِﻴَﺪِﻩِۦۚ ٢٤٩ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٢٤٩ ]
“তবে যে তার হাতের অঞ্জলি ভরে পান করে”।[সূরা বাকারা ২৪৯]
ইমাম কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কতক মুফাস্সির বলেছেন: “গারফাতুন” অর্থ এক
হাত দ্বারা পান করা। আর “গুরফাতুন” অর্থ দুই হাত দ্বারা পান করা”। আয়াতে যেহেতু
গুরফাতুন রয়েছে তাই আমরা বলতে পারি যে, বাদশাহ তালুতের অনুসারীগণ –যার
মধ্যে দাউদ ‘আলাইহিস সালামও ছিলেন- দুই হাতে পানি পান করে ছিলেন”। এসব দলিল থেকে প্রমাণ হয় যে, প্রয়োজন হলে দুই হাতে পান করা বৈধ। যেমন বড় পাত্র, অথবা কলসি, অথবা বালতী থেকে সরাসরি দুই হাতে পান করা। অথবা ডান হাতে সমস্যা হলে বাম হাতের সাহায্য নিয়ে দুই হাতে পান করা বৈধ। কারণ শয়তান দু’হাতে পান করে না।
#এক_হাতে_পান_করার_সময়_অপর_হাতের_সাহায্য_নেয়া: এক হাতে পান করার সময় যখন অপর হাতের সাহায্য নেয়া হয়, তখন যে হাতের অংশ গ্রহণ বেশী থাকে সে হাতে পান করাই গণ্য হয়। অর্থাৎ পানির পাত্র যদি বড় হয়, অথবা হাত ফসকে গ্লাস পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বা কোন জরুরতে ডান হাতে গ্লাস ধরে বাম হাতের সাহায্য
নেয়া হয়, তাহলে ডান হাতেই পান করা গণ্য হয়। এতে কোন সমস্যা নেই।
আর যদি বাম হাতে গ্লাস বা পানির পাত্র ধরে ডান হাতের সাহায্য বা সামান্য স্পর্শ গ্রহণ
করা হয়, তাহলে বাম হাতে পান করা গণ্য হয়। শরীয়তে যা নিষেধ।
কতক আলেম বাম হাতে পান করার নিষেধাজ্ঞাকে ইসলামী আদব, মোস্তাহাব ও সুন্নত
পরিপন্থী হিসেবে দেখেছেন।কতক আলেম বলেছেন ডান হাতে পান করা অবশ্য জরুরী,
বিনা প্রয়োজনে বাম হাতে পান করা হারাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বদা ডান হাতে পান করা, বাম হাতে পান
করাকে শয়তানি কর্ম বলা এবং বাম হাতে পানকারীকে বদ দোয়া দেয়া ইত্যাদি দ্বিতীয়
মতকে যথাযথ প্রমাণ করে। মুসলিমে বর্ণিত,
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদিস “তোমরা বাম হাতে খেয়ো না, কারণ শয়তান বাম হাতে খায়” প্রসঙ্গে ইব্ন আব্দুল বারর রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: “জাবের থেকে বর্ণিত হাদিসে বাম হাতে খাওয়া ও পান করার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কথা সর্বজন বিদিত যে, কোন বিষয়ে নির্দেশ দেয়ার অর্থ তার বিপরীত বিষয় থেকে নিষেধ করা।
#রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাম হাতে খাওয়া ও পান করার কঠিন নিষেধাজ্ঞা জেনে যে বাম হাতে খেল অথবা পান করল, অথচ ডান হাতে খেতে তার
কোন সমস্যা ছিল না, বা কোন বাঁধা তাকে ডান হাত থেকে বিরত রাখেনি, সে অবশ্যই আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানি করল। যে আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানি করল সে পথভ্রষ্ট হল”। [12]
#আমাদের দেশে বাম হাতে পান করার যে বদ অভ্যাস গড়ে ওঠেছে তা বৈধ নয়।
#যেমন বাম হাতে গ্লাস বা পানির পাত্র উঠিয়ে ডান হাতের সামান্য স্পর্শ নিয়ে পান করা।
কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় বাম হাতে গ্লাস তুলে ডান হাতের সামান্য স্পর্শ নেয় অতঃপর বাম হাতেই পানি পান করে। অর্থাৎ শুরুতে বাম হাতে পানির গ্লাস তুলল অতঃপর ডান হাতের স্পর্শ নিল, আবার মুখের স্পর্শ লাগার আগেই ডান হাত গ্লাস থেকে বিচ্ছিন্ন হল।
এভাবে মূলত বাম হাতেই পান করা হল, বা ডান হাতের সামান্য সাহায্য নেয়া হল, বা বাম
হাতের সাথে সাথে ডান হাতও নাড়াল, প্রকৃত নপক্ষে যা বাম হাতে পান করাই গণ্য হয়।
কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় ডান হাতের স্পর্শ পর্যন্ত লাগে না! এভাবে আস্তে আস্তে বাম হাতে পান করার বদ অভ্যাস গড়ে উঠে। আমাদের অনেকে যে অজুহাত বা কারণ দেখিয়ে বাম হাতে পান করেন, শরীয়তের দৃষ্টিতে তা গ্রহণযোগ্য নয়। অনেকে বলেন
ডান হাতে গ্লাস নিলে তাতে খাবার লাগে তাই বাম হাতে গ্লাস ধরি। এটা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কোন কারণ নয়।
গ্লাসে খাবার লাগলে কোন সমস্যা নেই, ধুলেই তা চলে যায়। বর্তমান যেহেতু সবাই আলাদা গ্লাস ব্যবহার করি, তাই এতে অপরের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। একাধিক ব্যক্তি একই গ্লাস ব্যবহার করার সময় হাত চেটে পরিষ্কার করে নিলে হয়, বা টিস্যু পেঁচিয়ে গ্লাস ধরা যায়।
হোটেল, পার্টি বা নিমন্ত্রণ অনুষ্ঠানে সবাইকে আলাদা গ্লাস দেয়া হয়, বা ওয়ান টাইম ব্যবহারের জন্য কাগজ বা প্লাস্টিকের গ্লাস দেয়া হয়, সেখানে গ্লাসে খাবার লাগলেও
সমস্যা নেই।
#দুঃখের বিষয় এ সুন্নতের বিপরীতে আমাদের দেশে বদ অভ্যাস কঠিন আকার ধারণ করেছে। কোন কারণ ছাড়াই আমরা বাম হাতে গ্লাস নিয়ে পান করি, যা সুন্নত পরিপন্থী ও নিন্দনীয় কাজ।
একটি আশ্চর্য বিষয়! আমরা খাবার সময় বাম হাতের ব্যবহারকে খুব খারাপ দৃষ্টিতে দেখি। খাবারের মাঝে গোস্ত ইত্যাদি ছেড়ার জন্য আমরা দাঁতের সাহায্য নেই, অনেকে পাশে থাকা সহপাঠীর সাহায্য পর্যন্ত গ্রহণ করি, তবু বাম হাত ব্যবহার করি না, অথচ এখানে বাম হাত ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। তাই দাঁতে কষ্ট না করে বা অপরের সাহায্য না নিয়ে বাম হাতের সাহায্য নেয়াই অধিক শ্রেয়।
এ জন্য খাবার শুরুতে উভয় হাত ধুয়ে নেয়া সুন্নত। সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
ﺑَﺮَﻛَﺔُ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡِ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀُ ﻗَﺒْﻠَﻪُ ﻭَﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀُ ﺑَﻌْﺪَﻩُ “
“… খানার বরকত হচ্ছে তার পূর্বে ও পরে ওযু করা”।[13]
তবে মুখে খাবার অবশ্যই ডান হাতে তুলতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে বাম হাতের সাহায্য নেয়া বৈধ।
অনেকে বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের প্রধান খাদ্য ছিল রুটি বা শক্ত খাবার। তাই খাবার সময় ডান হাতে গ্লাস ধরলে তাতে খাবার লাগত না,
কিন্তু আমাদের অধিকাংশ খাবার তরল। তাই আমাদের প্রয়োজন হয় বাম হাতে গ্লাস
ধরা। বস্তুত বিষয়টা পুরোপুরি সঠিক নয়, যদিও তখনকার অধিকাংশ খাবার শুষ্ক ছিল,
কিন্তু তরল খাবারও ছিল,
বিশেষ করে “সারিদ” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় খাবার ছিল। গোস্তের শুরবায় রুটি ভিজিয়ে সারিদ তৈরি করা হয়, যা আমাদের ডাল- ভাতের ন্যায় তরল, কিন্তু তবুও কেউ কখনো বর্ণনা করেননি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতে গ্লাস তুলে ডান হাতের সাহায্য নিয়ে পান করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ছায়ার মত অনুসরণকারী সাহাবি ও জীবন সঙ্গিনী ঘরের স্ত্রীগণ পর্যন্ত দেখেননি তিনি বাম হাতে পাত্র নিয়ে ডান হাতে সামান্য ভর রেখে পান করেছেন!
যদি তারা দেখতেন অবশ্যই বর্ণনা করতেন। অথচ কম হলেও দিনে দুইবার তিনবার খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজন হয়, পানি তো তারচেয়ে বেশী! বরং আমরা দেখতে পাই খাবার
দস্তরখানে তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন:
” ﻳﺎ ﻏﻼﻡ ﺳﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻛﻞ ﺑﻴﻤﻴﻨﻚ ﻭﻛﻞ ﻣﻤﺎ ﻳﻠﻴﻚ “
“হে বৎস বিসমিল্লাহ বল, ডান হাতে খাও ও সামনে থেকে খাও”। অতএব হাতে খাবার লাগা এমন অপারগতা নয় যে কারণে হারাম হালাল হয় ও নিষিদ্ধ কর্ম বৈধ হয়। তাই এসব অজুহাত পেশ করে বাম হাতে পান করা কোন মুসলিমের পক্ষে সমীচীন নয়।
সুতরাং আপনার সাথীদের ডান হাতে পানি পান করাই সঠিক ও সুন্নত মোতাবেক।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসরণ
করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ ভাল জানেন।
[1] মুসলিম: (২০২০)
[2] মুসলিম: (২০১৯)
[3] আহমদ: (৫৯৫০), মুস্তাখরাজ আবু
আওয়ানাহ:
(৬৪৮৩)
[4] মুসলিম: (৩৭৭৩)
[5] আহমদ: (২৩৯১৯)
[6] আবু দাউদ: (৩০)
[7] আবু দাউদ: (৩৫১৪)
[8] সূরা আন-আম: (১১৯)
[9] মুসলিম: (৩৭৮৪)
[10] তিরমিযি: (১৮৯২), ইব্ন মাজাহ: (৩৪২৩),
মুহাদ্দিস আলবানি সহিহ
তিরমিযিতে হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
[11] আহমদ: (১৪২৩৪)
[12] আল-ইস্তেযকার: (৮/৩৪১-৩৪২)
[13] আবু দাউদ: (৩২৭১), তিরমিযি: (১৭৬৪)
শাইখ মুফতি সানাউল্লাহ নজির আহমদ

No comments:

Post a Comment

প্রশ্ন: সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যদি কেউ সারা জীবন সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতি নেয়ার পর তার জন্য করণীয় কি?

প্রশ্ন: সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যদি কেউ সারা জীবন সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতি নেয়...