মুমিনের গুণাবলী গুলো কি কি ?
মুমিনের গুণাবলী
-প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ ثُمَّ
لَمْ يَرْتَابُوْا وَجَاهَدُوْا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي
سَبِيْلِ اللهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ- (سورت الحجرات ১৫)-
‘প্রকৃত মুমিন তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।
অতঃপর তাতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করে না এবং তাদের মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর
পথে জিহাদ করে। বস্ত্ততঃপক্ষে তারাই হ’ল সত্যনিষ্ঠ’ (হুজুরাত ৪৯/১৫)।
অত্র আয়াতে প্রকৃত মুমিনের দু’টি গুণ বর্ণিত হয়েছে। ১. সন্দেহমুক্ত দৃঢ়
ঈমান এবং ২. আল্লাহর পথে সংগ্রাম ও সৎকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে উক্ত ঈমানের
প্রমাণ উপস্থাপন।
‘জিহাদ’ অর্থ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। যা কথা, কলম, সংগঠন তথা সার্বিকভাবেই
হয়ে থাকে। সশস্ত্র জিহাদও এর মধ্যে শামিল। যুগে যুগে উদ্ভূত শিরকী
দর্শনচিন্তা ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাওহীদভিত্তিক দর্শনচিন্তা ও সুস্থ
সংস্কৃতি বিকাশ সাধনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়োজিত করাই হ’ল ইসলামের
চিরন্তন জিহাদ। স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে যা সর্বদা সর্বত্র প্রযোজ্য।
সেদিকে ইঙ্গিত করেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
جَاهِدُوا الْمُشْرِكِينَ بِأَمْوَالِكُمْ
وَأَنْفُسِكُمْ وَأَلْسِنَتِكُمْ ‘তোমরা জিহাদ কর মুশরিকদের বিরুদ্ধে
তোমাদের মাল দ্বারা, জান দ্বারা ও যবান দ্বারা’।[1] কুরআনের সর্বত্র জিহাদের বর্ণনায় আল্লাহ প্রথমে মালের কথা এনেছেন। কারণ জিহাদে প্রথম মালের প্রয়োজন হয়।
মুমিনের ৭টি গুণ বর্ণনা করে অন্যত্র আল্লাহ বলেন, قَدْ أَفْلَحَ
الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِي صَلاَتِهِمْ خَاشِعُوْنَ- وَالَّذِيْنَ
هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ
فَاعِلُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ- إِلاَّ عَلَى
أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ
مَلُوْمِيْنَ- فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ
الْعَادُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ-
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ- أُولَئِكَ هُمُ
الْوَارِثُوْنَ- الَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا
خَالِدُوْنَ-‘সফলকাম হ’ল ঐসব মুমিন’ (১) ‘যারা তাদের ছালাতে গভীরভাবে
মনোযোগী’ (২) ‘যারা অনর্থক ক্রিয়া-কর্ম এড়িয়ে চলে’ (৩) ‘যারা সঠিকভাবে
যাকাত আদায় করে’ (৪) ‘যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে’ (৫) ‘নিজেদের
স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত। কেননা এসবে তারা নিন্দিত হবে না’ (৬)
‘অতঃপর এদের ব্যতীত যারা অন্যকে কামনা করে, তারা হ’ল সীমা লংঘনকারী’ (৭)
‘আর যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করে’ (৮) ‘যারা তাদের ছালাত
সমূহের হেফাযত করে’ (৯) ‘তারাই হ’ল উত্তরাধিকারী’ (১০) ‘যারা উত্তরাধিকারী
হবে ফেরদৌসের। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (মুমিনূন ২৩/১-১১)।
উপরোক্ত আয়াতগুলিতে মুমিনের ৭টি গুণ বর্ণিত হয়েছে। প্রথম গুণ হ’ল ‘তারা
ছালাতে গভীরভাবে মনোযোগী’। তারা খুশূ-খুযূর সাথে তন্ময়-তদ্গতভাবে ছালাত
আদায় করে। এর বিপরীতে আরও দু’প্রকার মুছল্লীর কথা এসেছে কুরআনে। একদল
মুছল্লী হ’ল ‘উদাসীন’ (سَاهُوْنَ)। আল্লাহ বলেন, فَوَيْلٌ
لِّلْمُصَلِّيْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلاَتِهِمْ سَاهُوْنَ ‘দুর্ভোগ
ঐসব মুছল্লীর জন্য, যারা তাদের ছালাতে উদাসীন’ (মাঊন ১০৭/৫)। অন্য একদল
মুছল্লী হ’ল ‘অলস’ (كُسَالَى)। এটা হ’ল মুনাফিকদের ছালাত। আল্লাহ বলেন,
وَإِذَا قَامُوْا إِلَى الصَّلاَةِ قَامُوْا كُسَالَى ‘যখন তারা ছালাতে
দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়’ (নিসা ৪/১৪২)। আয়াতদৃষ্টে বুঝা যায় যে, উদাসীন ও
অলস মুছল্লীরা জাহান্নামী হবে এবং কেবল মনোযোগী মুছল্লীরাই জান্নাতী হবে।
আর তারাই হ’ল সফলকাম মুমিন। কেননা হৃদয় মনোযোগী হলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মনোযোগী
হয়। আর উভয়ের সহযোগে কর্ম সফল হয়। হৃদয়ের টান ও আকর্ষণ না থাকলে কোন কর্মই
যথার্থ হয় না। আর আল্লাহর কাছেও তা কবুল হয় না।
(২) ‘যারা অনর্থক কথা ও কাজ এড়িয়ে চলে’। শিরক ও বিদ‘আতসহ সকল প্রকার পাপের
কাজ ও বাজে কথাসমূহ এর মধ্যে শামিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مِنْ حُسْنِ
إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيْهِ ‘মানুষের সুন্দর ইসলামের
অন্যতম নিদর্শন হ’ল অনর্থক বিষয়সমূহ পরিহার করা’।[2]
আল্লাহ বলেন, وَإِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا ‘যখন তারা
অসার ক্রিয়া-কলাপের সম্মুখীন হয়, তখন তারা সম্মান বাঁচিয়ে তা অতিক্রম করে’
(ফুরক্বান ২৫/৭১)। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘মানুষের দ্বীনের জন্য চারটি
হাদীছ যথেষ্ট : (১) সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল[3] (২) সুন্দর ইসলামের অন্যতম নিদর্শন হ’ল অনর্থক বিষয়সমূহ পরিহার করা[4] (৩) কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য ঐ বস্ত্ত ভালবাসে যা সে নিজের জন্য ভালবাসে[5]
এবং (৪) হালাল স্পষ্ট ও হারাম স্পষ্ট। এ দু’য়ের মধ্যে বহু বস্ত্ত রয়েছে
অস্পষ্ট। অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। অতএব যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ বিষয়ে পতিত
হ’ল সে হারামে পতিত হ’ল’।[6] ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন,
عُمْدَةُ الدِّينِ عِنْدَنَا كَلِمَاتٌ + أَرْبَعٌ قَالَهُنَّ خَيْرُ الْبَرِيَّةْ
اتَّقِ السَّيِّئَاتِ، وَازْهَدْ، وَدَعْ مَا + لَيْسَ يَعْنِيكَ، وَاعْمَلَنَّ بِنِيَّةْ
‘আমাদের নিকট দ্বীনের উত্তম বস্ত্ত হ’ল চারটি কথা। যা বলেছেন সৃষ্টির সেরা
ব্যক্তি (অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ) : (১) মন্দ থেকে বেঁচে থাক (২) দুনিয়াত্যাগী
হও (৩) অনর্থক বিষয় পরিহার কর এবং (৪) সংকল্পের সাথে কাজ কর’।[7]
(৩) ‘যারা নিয়মিতভাবে যাকাত আদায় করে’। এর দ্বারা অধিকাংশ বিদ্বান মালের
যাকাত বুঝিয়েছেন। তবে আয়াতটি মাক্কী। আর যাকাত ফরয হয়েছে ২য় হিজরীতে
মদীনায়। অতএব এর ব্যাখ্যা হ’ল মূল যাকাত ফরয হয়েছে মক্কায়। কিন্তু তার
নিছাব নির্ধারিত হয়েছে মদীনায়। যেমন বলা হয়েছে وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ
حَصَادِهِ ‘তোমরা ফসলের নির্ধারিত অংশ আদায় কর তা কর্তনের দিন’ (আন‘আম
৬/১৪১)। এই আয়াত মক্কায় নাযিল হয়েছে এবং এর দ্বারা ওশর ফরয করা হয়েছে।
কিন্তু তার নিছাব নির্ধারিত হয়েছে মদীনায়। যা স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টি
লাভের উদ্দেশ্যে তাঁরই দেয়া রিযিক থেকে আল্লাহর ধনী বান্দারা তার
অভাবগ্রস্ত বান্দাদের দিয়ে থাকে। এর দ্বারা তাদের মালের পরিশুদ্ধিতা আসে।
অতএব ‘যাকাত’ শব্দের অর্থ যেহেতু ‘পরিশুদ্ধিতা’ সেহেতু এর দ্বারা মালের
শুদ্ধিতা এবং মনের শুদ্ধিতা দু’টিই অর্থ নেয়া যেতে পারে। লোক দেখানো যাকাত
কবুল হয় না। কারণ সেখানে মনের কপটতা থাকে। ফলে ঐ যাকাতে হৃদয়ের শুদ্ধিতা
হাছিল হয় না এবং তা আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন,
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا- وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا ‘সফলকাম হ’ল
সেই মুমিন, যে তার হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করেছে’। ‘আর ব্যর্থকাম হয়েছে সেই
ব্যক্তি, যে তার হৃদয়কে কলুষিত করেছে’ (শাম্স ৯১/৯-১০)। বস্ত্ততঃ কামেল
মুমিন সেই ব্যক্তি যে তার মাল ও হৃদয় দু’টিকেই পরিশুদ্ধ করেছে।
(৪) ‘যারা তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে’। অত্র আয়াতে মুমিন পুরুষকে তার
স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ব্যতীত অন্যত্র যৌন বাসনা চরিতার্থ করতে নিষেধ করা
হয়েছে। অনুরূপভাবে মুমিনা নারী তাদের স্বামী ব্যতীত অন্যকে কামনা করবে না
এবং তাদের ক্রীতদাসকেও ব্যবহার করবে না। মুমিন পুরুষ একই সঙ্গে সর্বাধিক
চারজন স্ত্রী রাখতে পারে, যদি তাদের মধ্যে ন্যায় বিচার ও সমতা বিধান করতে
পারে। কিন্তু একজন মুমিনা স্ত্রী একাধিক স্বামী গ্রহণ করতে পারে না। এটাই
আল্লাহর বিধান। এ বিধানের কোন ব্যত্যয় হবে না। কেউ করলে সে দুনিয়াতে
ব্যভিচারের দন্ড ভোগ করবে অথবা আখেরাতে জাহান্নামী হবে। পুরুষ কেন একাধিক
স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে, আর স্ত্রী কেন একাধিক স্বামী গ্রহণ করতে পারে না। এ
বিষয়ে তর্ক করা আল্লাহর অবাধ্যতার শামিল। প্রকৃত জ্ঞানীদের নিকট বিষয়টি
স্পষ্ট। মূর্খরাই কেবল এ নিয়ে হৈ চৈ করে। অতএব জ্ঞানীদের উচিত ঐসব কাজ থেকে
বিরত থাকা যা মানুষকে নির্লজ্জতায় উসকে দেয়। আল্লাহ বলেন, وَلاَ
تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ‘তোমরা প্রকাশ্য ও
গোপন কোন অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না’ (আন‘আম ৬/১৫১)। তিনি বলেন, وَلاَ
تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلاً ‘তোমরা
যেনার নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ’ (ইসরা ১৭/৩২)।
অতএব যেসব লেখনী, বক্তব্য ও প্রদর্শনী মানুষকে যেনা-ব্যভিচারের দিকে
প্ররোচিত করে ও বেহায়াপনার দিকে ধাবিত করে সেসব বস্ত্ত থেকে অবশ্যই বিরত
থাকতে হবে। পরিবার প্রধান, সমাজনেতা ও রাষ্ট্র নেতাদের এ বিষয়ে কঠোর দৃষ্টি
রাখতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং
প্রত্যেকে স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে (কিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসিত হবে। রাষ্ট্র
নেতা তার জনগণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। স্বামী তার পরিবার সম্পর্কে
জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীর পরিবার ও সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত
হবে। গোলাম তার মনিবের মাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। সাবধান! তোমরা
প্রত্যেকে স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’।[8] তিনি বলেন,
كُتِبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ نَصِيْبُهُ مِنَ الزِّنَى مُدْرِكٌ ذَلِكَ لاَ
مَحَالَةَ فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ وَالأُذُنَانِ زِنَاهُمَا
الاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلاَمُ وَالْيَدُ زِنَاهَا
الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى
وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ-
আদম সন্তানের জন্য যেনার অংশ নির্ধারিত রয়েছে, যাতে সে অপরিহার্যভাবে পতিত
হয়। যেমন তার চোখের যেনা হ’ল দেখা, কানের যেনা হ’ল শোনা, যবানের যেনা হ’ল
কথা বলা, হাতের যেনা হ’ল ধরা, পায়ের যেনা হ’ল সেদিকে ধাবিত হওয়া, অন্তরের
যেনা হ’ল তার কামনা করা ও আকাংখা করা। অতঃপর গুপ্তাঙ্গ সেটাকে সত্য অথবা
মিথ্যা প্রতিপন্ন করে’।[9]
অতএব সমাজনেতা ও সরকারের কর্তব্য হ’ল ব্যভিচারে প্ররোচিত করে এমন সকল
বিষয়কে নিরুৎসাহিত করা ও বন্ধ করা। নইলে সমাজ দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাবে। যেভাবে
বিগত সকল সভ্যতা ধ্বংসের প্রধান কারণ ছিল নারী ও মদ। আর সবচেয়ে বড় কারণ
ছিল ঈমানহীনতা। কেননা মানুষকে ঈমানহীন ও মুশরিক বানাতে পারলেই সে সহজে
শয়তানের গোলামে পরিণত হয়। আর শয়তানের প্রধান বাহন হ’ল নারী ও মদ।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নারী হ’ল গোপন বস্ত্ত। অতঃপর (বেপর্দা) নারী যখনই
ঘর থেকে বের হয়, শয়তান তার পিছে ধায়’।[10] তিনি বলেন, তোমরা মদ্যপান করো না। কেননা এটি হ’ল সকল পাপের উৎস’।[11] তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার জিহবা ও গুপ্তাঙ্গের যামিন হবে, আমি তার জান্নাতের যামিন হব’।[12]
বর্ণিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নারী ও পুরুষের মধ্যে বিবাহ বহির্ভূত
সকল প্রকার যৌনাচার নিষিদ্ধ। বিকৃত রুচির লোকেরা সমমৈথুন, পায়ুমৈথুন,
হস্তমৈথুন, পশুমৈথুন ইত্যাদি নানা শয়তানী কর্মকে আইনসিদ্ধ করার চেষ্টা করে
থাকে। কিন্তু আল্লাহর বিধানে এর সবই নিষিদ্ধ এবং অগ্রাহ্য।
(৫-৬) ‘যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে’। অত্র আয়াতে দ্বীনী ও
দুনিয়াবী কথা ও কাজের সকল প্রকার আমানত বুঝানো হয়েছে। আর আমানতের খেয়ানত
করা ও ওয়াদা খেলাফ করা মুনাফিকের বড় লক্ষণ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
মুনাফিকের নিদর্শন হ’ল তিনটি : যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন সে ওয়াদা
করে তা খেলাফ করে এবং তার কাছে কিছু আমানত রাখা হলে তার খেয়ানত করে’।[13]
আর সবচেয়ে বড় খেয়ানত হ’ল আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা। যে
অঙ্গীকার মানুষ পৃথিবীতে আবাদ হওয়ার আগে তার পালনকর্তা আল্লাহর সঙ্গে
করেছিল। যেদিন আল্লাহ তাদেরকে বলেছিলেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তারা
বলেছিল, হ্যাঁ’ (আ‘রাফ ৭/১৭২-৭৩)।[14] কিন্তু দুনিয়াতে আবাদ হওয়ার পর শয়তানের কুহকে পড়ে তারা সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তাওহীদ ভুলে গিয়ে শিরকে পতিত হয়।
অতঃপর বড় খেয়ানত হ’ল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা। যখন
মানুষ তার হাতে হাত রেখে ইসলামের ও আনুগত্যের বায়‘আত করেছে। অথচ পরে তা
অনেকে কার্যত ভঙ্গ করে। বহু মানুষ তাঁর রেখে যাওয়া ইসলাম কবুল করেছে। অথচ
পরে তাঁর বিধান অমান্য করেছে। বিদায় হজ্জের ভাষণে উপস্থিত লাখো মুসলিমের
মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলে গেছেন, যার
হাতে মুহাম্মাদের জীবন তার কসম করে বলছি, ইহুদী হৌক নাছারা হৌক যে কেউ আমার
আগমনবার্তা শুনেছে, অথচ যে ইসলামী শরী‘আত নিয়ে আমি আগমন করেছি তার উপরে
ঈমান না এনে মৃত্যু বরণ করেছে। সে অবশ্যই জাহান্নামের অধিবাসী হবে’।[15]
তিনি আরও বলেন, আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত রেখে যাচ্ছি। যতদিন সে
দু’টি বস্ত্ত তোমরা কঠিনভাবে অাঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।
আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ’।[16]
অথচ মুসলিম দাবীদার হওয়া সত্বেও আমরা হর-হামেশা কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধিতা
করে চলেছি। আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَخُونُوا
اللهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ ‘হে
মুমিনগণ! তোমরা জেনে শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে এবং তোমাদের মধ্যকার
পারস্পরিক আমানত সমূহে খেয়ানত করো না’ (আনফাল ৮/২৭)। তিনি বলেন,
وَأَوْفُواْ بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْؤُوْلاً ‘তোমরা
অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয়ই তোমরা অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’ (ইসরা
১৭/৩৪)।
(৭) ‘যারা তাদের ছালাত সমূহের হেফাযত করে’। অর্থাৎ যথা সময়ে নিয়মিতভাবে ও আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করে (নিসা ৪/১০৩)।[17]
প্রকৃত প্রস্তাবে এর অর্থ হ’ল ছালাতের ওয়াক্ত হওয়া বা আযান হওয়ার সাথে
সাথে ব্যস্ত হয়ে উঠে পড়া ও জামা‘আতের জন্য দ্রুত সেদিকে ধাবিত হওয়া,
ছালাতের রুকূ-সিজদা এবং উঠা-বসা সবকিছু ছহীহ হাদীছ মোতাবেক পূর্ণরূপে আদায়
করা ও সর্বোপরি ধীরে-সুস্থে গভীর মনোযোগ সহকারে ছালাত আদায় করা।[18]
বর্ণিত আয়াতগুলিতে ৭টি গুণের মধ্যে প্রথমে ছালাত ও শেষে ছালাতের কথা বলে এর
অসীম গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। প্রথমে খুশূ-খুযূর সাথে ছালাত আদায়ের কথা এবং
শেষে ছালাতের হেফাযতের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে।
(ক) ছালাত আদায় করা ব্যতীত সফলকাম মুমিন হওয়ার কোন সুযোগ নেই। (খ) কেবল
খুশূ-খুযূই যথেষ্ট নয়, বরং অবশ্যই তা ছহীহ হাদীছ মোতাবেক হ’তে হবে। যারা
ছালাতকে ধ্যান করা বলতে চান অথবা যারা ছহীহ হাদীছ পাওয়ার পরেও অন্য তরীকায়
ছালাত আদায় করেন, তারা বিষয়টি অনুধাবন করুন।
মনে রাখা উচিত যে, ছালাতের এই পদ্ধতি কোন মানুষের কপোল কল্পিত নয়। বরং
সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক জিব্রীলের মাধ্যমে প্রেরিত। যা তিনি স্বীয় ইমামতিতে
পবিত্র কা‘বা চত্বরে মাক্বামে ইবরাহীমের পাশে দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে
হাতে-নাতে দু’দিন শিখিয়েছেন।[19]
বস্ত্ততঃ ছালাতই একমাত্র ইবাদত, যা বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বান্দাকে
শিখানো হয়েছে। অতএব এতে কমবেশী করার অধিকার কারু নেই এবং ছালাত বাদ দিয়ে
অন্য কোন তরীকায় আল্লাহকে পাবারও সুযোগ নেই।
আর ছালাত যে নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম ইবাদত, সেবিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
اسْتَقِيمُوا وَلَنْ تُحْصُوا وَاعْلَمُوا أَنَّ خَيْرَ أَعْمَالِكُمُ
الصَّلاَةُ وَلاَ يُحَافِظُ عَلَى الْوُضُوءِ إِلاَّ مُؤْمِنٌ‘তোমরা সর্বদা
আল্লাহর আনুগত্যে দৃঢ় থাক। যদিও (সকল বিষয়ে) যথার্থভাবে তোমরা সেটা কখনো
পারবে না। জেনে রেখ তোমাদের সমস্ত নেক আমলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হ’ল ছালাত (অতএব
কমপক্ষে সেটা যথাযথভাবে আদায়ে দৃঢ় থাকো)। আর সর্বদা ওযূর হেফাযত করতে পারে
না (অর্থাৎ সঠিকভাবে ওযূ করতে পারে না পূর্ণ) মুসলিম ব্যতীত’।[20]
অত্র হাদীছে বুঝা যায় যে, সকল নেক আমল যথাযথভাবে আদায় করা ও তার উপর সর্বদা
দৃঢ় থাকা সম্ভব না হলেও যথাযথভাবে ছালাত আদায়ে দৃঢ় থাকা অপরিহার্য। কেননা
এটিই হ’ল সর্বোত্তম নেক আমল (أفضل الأعمال)।
উপরে বর্ণিত গুণাবলী অর্জন করতে পারলে মানুষ জান্নাতুল ফেরদৌসের
উত্তরাধিকারী হ’তে পারবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فَإِذَا سَأَلْتُمُ
اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ الْفِرْدَوْسَ ، فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الْجَنَّةِ
وَأَعْلَى الْجَنَّةِ ، أُرَاهُ فَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ ، وَمِنْهُ
تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الْجَنَّةِ ‘যখন তোমরা প্রার্থনা করবে, তখন `ফেরদৌস’
প্রার্থনা করবে। কেননা এটিই হ’ল জান্নাতের মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ
স্তর। এখান থেকেই জান্নাতের নদীসমূহ প্রবাহিত হয়েছে এবং এর উপরেই আমাকে
আল্লাহর আরশ দেখানো হয়েছে।[21]
অতঃপর মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি গুণ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ، وَمَنْ
كَانَ فِى حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِى حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ
مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ
الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। (১) সে তার উপর যুলুম করবে না (২) তাকে
লজ্জিত করবে না। (৩) আর যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকবে, আল্লাহ তার
সাহায্যে থাকবেন। (৪) যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাকে
কিয়ামতের দিনের বিপদ সমূহের একটি বড় বিপদ দূর করে দিবেন। (৫) যে ব্যক্তি
কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি
গোপন রাখবেন’।[22]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَاللهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ
فِى عَوْنِ أَخِيهِ ‘আল্লাহ বান্দার সাহায্যে অতক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ বান্দা
তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে’।[23]
তিনি বলেন, (৬) যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না ও বড়দের মর্যাদা বুঝে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’।[24] বস্ত্ততঃ মুসলমানদের পারিবারিক ও সামাজিক শৃংখলা এবং পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় রাখার জন্য অত্র হাদীছটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে যে গুণটি অর্জন করলে আল্লাহর রহমত অবশ্যই নাযিল হয়, সেটি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ
يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ
الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللهَ وَرَسُولَهُ
أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُ إِنَّ اللهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ-
‘(মুনাফিকদের বিপরীতে) মুমিন পুরুষ ও নারীগণ পরস্পরের বন্ধু। তারা সৎকাজের
আদেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে। তারা ছালাত কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে।
তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এসব লোকদের প্রতি অবশ্যই আল্লাহ
অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’ (তাওবাহ ৯/৭১)।
অত্র আয়াতে মুমিন পুরুষ ও নারীর প্রধানতম গুণটি বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা
হ’ল ‘সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ’। মূলতঃ এ কারণেই মুসলিম উম্মাহর উদ্ভব
হয়েছে এবং এটা যথাযথভাবে প্রতিপালনের মধ্যেই রয়েছে মুসলিম উম্মাহর
শ্রেষ্ঠত্ব। যেমন আল্লাহ বলেন,كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ
لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
وَتُؤْمِنُونَ بِاللهِ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে
মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা ন্যায়ের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে নিষেধ করবে
এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখবে’ (আলে ইমরান ৩/১১০)।
বস্ত্ততঃ ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি হ’ল আল্লাহর অহী, যা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ
হাদীছ সমূহে বিধৃত রয়েছে। যার যথার্থ বুঝ হাছিল করতে হবে ছাহাবায়ে কেরাম ও
সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী। অন্যের বুঝ অনুযায়ী নয়। এর ফলেই সমাজে
আল্লাহর রহমত নাযিল হবে। যার ওয়াদা আল্লাহ অত্র আয়াতে করেছেন।
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছসমূহে বর্ণিত সফলকাম মুমিনের উপরোক্ত গুণাবলী একত্রে নিম্নরূপ :
(১) যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি দ্বিধাহীনচিত্তে বিশ্বাস পোষণ করেন (২)
যারা তাদের মাল ও জান দিয়ে সর্বদা আল্লাহর পথে জিহাদ করেন। (৩) যারা ছালাতে
গভীরভাবে মনোযোগী হন (৪) যারা অনর্থক ক্রিয়া-কলাপ হ’তে বিরত থাকেন (৫)
যারা নিয়মিত যাকাত দেন (৬) যারা নিজেদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করেন (৭-৮) যারা
আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করেন (৯) যারা তাদের ছালাতের যথাযথ হেফাযত করেন
(১০) যারা অন্য মুসলিমের প্রতি যুলুম করেন না (১১) তাকে লজ্জিত করেন না
(১২) যারা অন্য মুসলিমের সাহায্যে থাকেন (১৩) যারা অন্যের কষ্ট দূর করেন
(১৪) যারা অন্য মুসলিমের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখেন (১৫) যারা ছোটকে স্নেহ করেন
ও বড়কে সম্মান করেন (১৬) যারা সৎকাজের আদেশ দেন ও অসৎকাজে নিষেধ করেন।
উপরোক্ত গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন-আমীন!
No comments:
Post a Comment