Wednesday, August 22, 2018

রাসূল_সাল্লাল্লাহু_আলাইহি_ওয়াসাল্লামের_পক্ষ_থেকে_কোরবানী: কী_বলে_ইসলাম?

রাসূল সা. এর পক্ষ থেকে কুরবানী করা যাবে কি যাবেনা এ নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মাঝে তিনটি মত পাওয়া যায়।
#এক- একদল ওলামায়ে কেরাম মনে করেন, রাসূল সা.এর পক্ষ থেকে কুরবানী করা শুধু জায়েযই নয় বরং এটি উত্তম ও সৌভাগ্যের ব্যাপারও বটে। তাদের যুক্তি হল, রাসূল সা. যেহুতু উম্মতের পক্ষ থেকে কোরবানী করেছেন তাই উম্মত হিসাবে আমাদেরও উচিৎ তাঁর পক্ষ থেকে কোরবানী করা। দ্বিতীয়ত তারা তাদের মতের স্বপক্ষে একটি জঈফ হাদীসও দলিল হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন সেটি হল-

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতেন। (আবু দাউদ-২৭৯০, তিরমিযী-১৪৯৫, আহমদ-১২১৯)।
সুতরাং হযরত আলির অনুসরণে উম্মতেরও রাসুলের নামে কুরবানী করা উচিত।
#দুই- আরেকদল ওলামায়ে কেরাম মনে করেন যে, রাসূল সা.এর পক্ষ থেকে কোরবানী করার প্রমাণ নেই এ কথাই সঠিক, তথাপিও যদি কেউ রাসূল সা. এর পক্ষ থেকে কোরবানী করে তা হয়ে যাবে। তবে এর মাংসের কোন অংশ নিজে খেতে পারবেনা। গরীবদের মাঝে দান করে দিতে হবে। কারণ তখন তা সাদাকা হিসাবে গণ্য হবে। মূলত মৃতের পক্ষ থেকে দান করার উপর কিয়াস করে তারা এই ফাতাওয়াটি দিয়েছেন।
#তিন- ওলামায়ে কেরামের বড় একটি অংশ মনে করেন যে, রাসূল সা.এর পক্ষ থেকে কোরবানী করা যাবেনা। তাদের যুক্তি হল, রাসূল সা. থেকে এই মর্মে কোন হাদীস পাওয়া যায়না যে, তিনি উম্মতকে তাঁর পক্ষ থেকে কোরবানী করার আদেশ করেছেন। দ্বিতীয়ত সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবে তাবেঈন ও পরবর্তী আইম্মায়ে সালাফ থেকেও এর পক্ষে কোন সমর্থন পাওয়া যায়না।
তৃতীয়ত রাসূল সা. কর্তৃক আলী রা. কে কোরবানীর ওসিয়্যত সংক্রান্ত যে হাদীসটি আবু দাউদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজায় বর্ণিত হয়েছে সে হাদীসটি যইফ। ইমাম আবু দাউদ হাদীসটি বর্ণনার পর লিখেছেন, এটি একটি গরীব হাদীস। শারীক ছাড়া এই হাদীসটি আর কেউ বর্ণনা করেন নি। এই হাদীসের মূল রাবী হলেন হানাশ, তাঁর সম্পর্কে ইমাম মুনযিরী রহ বলেন, সে অধিকাংশ সময়ই ধারণা ও কল্পনা প্রসুত কথা বর্ণনা করতো। যা অন্য কোন সিকাহ বা বিশ্বস্ত কেউ করতেন না। আর এভাবেই সে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসাবে পরিগণিত হয়।
ইমাম মোবারকপুরী বলেন, শারীক একজন মাজহুল বা অপিচিত রাবী। সুতরাং তাঁর এই হাদীসটি জইফ।
শায়খ আলবানী রহ. বলেন, শারীকের স্মরণ শক্তি ভালো না থাকার দরুন হাদীসটির সনদ দুর্বল হয়ে পড়েছে। আর হানাশকে জমহুর ওলামায়ে কেরাম জঈফ বলে সাব্যস্ত করেছেন। অপর রাবি আবুল হাসানও মাজহুল বা অপরিচিত।(তুহফাতুল আহওয়াজী)।
পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারার বিশিষ্ট আলেম, মসজিদে নববীর ওস্তাদ ও মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীসের স্বনামধন্য অধ্যাপক ও সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ শায়খ আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদ হা.ও তার আবু দাউদের ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখিত কারণ সমূহের কারণে হাদীসটিকে জঈফ বলেছেন।
সুতরাং যখন কোন হাদীস মুহাদ্দিসীনে কেরামগণের নিকট জঈফ বা দুর্বল হিসাবে সাব্যস্ত হয় তখন করণীয় মূলনীতি হল, তা গ্রহণ না করা। আর যেহুতু রাসূল সা. এর পক্ষ থেকে কোরবানী করার স্বপক্ষে কোন বিশুদ্ধ প্রমাণ নেই তাই এ ক্ষেত্রেও মূল হুকুম হল তা পরিহার করা।
দ্বিতীয়ত যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, হযরত আলীর হাদীসটি সহীহ তবুও বলতে হবে যে, এটি শুধুমাত্র তার জন্যই খাস। কেননা রাসূল সা. শুধু তাকেই কোরবানীর জন্য ওসিয়্যত করেছেন। উম্মতের অন্য কাউকে করেন নি, যেমনটি আবু দাউদের রেওয়াতেও বর্ণীত হয়েছে যে, রাসূল সা. হযরত আলী ছাড়া আর কোন মানুষকে ওসিয়্যত করেন নি। সুতরাং ঈমান, ইনসাফ ও শরীয়ার দাবী হল শরঈ নুসূস ও তার বর্ণীত বিধান মেনে চলা এবং তার সীমা লঙ্ঘন না করা।
শেষ কথা হল, কুরবানী একটি ইবাদত। আর ইবাদতের ক্ষেত্রে মুল নীতি হল আল মানউ ওয়াত তাউক্বীফ। অর্থাৎ শরীয়তে যেভাবে যে আমল বর্ণীত হয়েছে সেটি সেভাবেই থাকবে। এতে নতুন করে কিছু করার অনুমতি নেই। এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে বলা যায়, যখন কোন মুসলিম কোরবানী করবে তখন সে তাঁর নিজের পক্ষ থেকে করবে। পাশাপাশি ইসালে সওয়াবের নিয়তে তাঁর পরিবারের জীবিত ও মৃত সকলকেও তাতে শরীক করবে। জীবিতদের থেকে আলাদা করে স্বতন্ত্রভাবে কেবল রাসূল সা. বা মৃতদের পক্ষ থেকে কোরবানী করবেনা। কারণ, রাসূল সা. কোন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে আলাদাভাবে কোরবানী করেন নি। বরং তিনি তার কোরবানীতে ইসালে সওয়াবের জন্য তার পড়িবারের জীবিত, মৃত ও তার সকল উম্মতকে শরীক করেছেন। তিনি তাঁর সবচেয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী হযরত খাদিজা রা., সবচেয়ে প্রিয়জন চাচা হযরত হামযাহ রা. কিংবা তাঁর যে সকল সন্তান তাঁর জীবদ্দশায় মৃত্যু বরণ করেছিলেন, তাদের জন্য আলাদা কোন কোরবানী করেন নি।
যেমন হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির পশু যবেহ করার সময় বললেন:
بِسْمِ اللهِ، اَللّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ، وَآلِ مُحَمَّدٍ، وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ
“আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করে নিন”। (মুসলিম- ১৯৬৭)।
এ ছাড়া কোন সাহাবী থেকেও এমন কোন আমল বর্ণিত হয়নি যে, তাদের কেউ মৃতের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে কোরবানী করেছেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সহীহ বুঝ ও তার উপর আমল করার তাওফীক দান করুন।
----------------------
যাকারিয়্যা মাহমূদ
বিএ (অনার্স), এম এ, এমফিল:
মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদী আরব।
দাঈ ও আলোচক: আল কুরআন মিউজিয়াম, মসজিদে নববী, মদীনা মুনাওয়ারা, সৌদী আরব।

No comments:

Post a Comment

প্রশ্ন: সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যদি কেউ সারা জীবন সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতি নেয়ার পর তার জন্য করণীয় কি?

প্রশ্ন: সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যদি কেউ সারা জীবন সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতি নেয়...