দাজ্জালের আগমন, ফেতনা ও বাচার উপায় সমুহ
দাজ্জালের আগমণ, ফিতনাসমূহ এবং বাঁচার উপায় লেখক: ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ) অনুবাদঃ ইউসুফ ইয়াসীন আখেরী যামানায় কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাবঘটবে। দাজ্জালের আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। মানবজাতির জন্যে দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সে সময়যে সমস্ত মুমিন জীবিত থাকবে তাদের জন্য ঈমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্তকঠিন হয়ে পড়বে। সমস্ত নবীই আপন উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন।আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও দাজ্জালের ফিতনাথেকে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন।ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনাকরেনঃ
“একদা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়িয়ে আল্লাহরযথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়েবললেনঃ আমি তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে সাবধান করছি। সকল নবীইতাদের উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছেদাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব যা কোন নবীই তাঁর উম্মাতকে বলেন নাই।তা হলো দাজ্জাল অন্ধ হবে। আর আমাদের মহান আল্লাহ অন্ধ নন।নাওয়াস বিন সামআন (রাঃ) বলেনঃ “একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সকাল বেলা আমাদের কাছে দাজ্জালের বর্ণনা করলেন। তিনি তারফিতনাকে খুব বড় করে তুলে ধরলেন। বর্ণনা শুনে আমরা মনে করলাম নিকটস্থখেজুরের বাগানের পাশেই সে হয়ত অবস্থান করছে। আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট থেকে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমরা আবারতাঁর কাছে গেলাম। এবার তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করলেনঃতোমাদের কি হলো? আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যেভাবেদাজ্জালের আলোচনা করেছেন তা শুনে আমরা ভাবলাম হতে পারে সেখেজুরের বাগানের ভিতরেই রয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেনঃ দাজ্জাল ছাড়া তোমাদের উপর আমার আরো ভয় রয়েছে। আমিতোমাদের মাঝে জীবিত থাকতেই যদি দাজ্জাল আগমণ করে তাহলেতোমাদেরকে ছাড়া আমি একাই তার বিরুদ্ধে ঝগড়া করবো। আর আমি চলেযাওয়ার পর যদি সে আগমণ করে তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজেকে হেফাযতকরবে। আর আমি চলে গেলে আল্লাহই প্রতিটি মুসলিমকে হেফাযতকারীহিসেবে যথেষ্ট ।[1]দাজ্জালের আগমণের সময় মুসলমানদের অবস্থাঃদাজ্জালের আগমণের পূর্ব মুহূর্তে মুসলমানদের অবস্থা খুব ভাল থাকবে। তারাপৃথিবীতে শক্তিশালী এবং বিজয়ী থাকবে। সম্ভবতঃ এই শক্তির পতন ঘটানোরজন্যই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে।দাজ্জালের পরিচয়ঃদাজ্জাল মানব জাতিরই একজন হবে। মুসলমানদের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরারজন্যে এবং তার ফিতনা থেকে তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পরিচয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মুমিনবান্দাগণ তাকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে এবং তার ফিতনা থেকে নিরাপদেথাকবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার যে সমস্ত পরিচয় উল্লেখকরেছেন মুমিনগণ তা পূর্ণ অবগত থাকবে। দাজ্জাল অন্যান্য মানুষের তুলনায়স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী হবে। জাহেল-মূর্খ ও হতভাগ্য ব্যতীত কেউদাজ্জালের ধোকায় পড়বেনা।নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জালকে স্বপ্নে দেখে তারশারীরিক গঠনের বর্ণনাও প্রদান করেছেন। তিনি বলেনঃ দাজ্জাল হবেবৃহদাকার একজন যুবক পুরুষ, শরীরের রং হবে লাল, বেঁটে, মাথার চুল হবে কোঁকড়া,কপাল হবে উঁচু, বক্ষ হবে প্রশস্ত, চক্ষু হবে টেরা এবং আঙ্গুর ফলের মত উঁচু।[2]দাজ্জাল নির্বংশ হবে। তার কোন সন্তান থাকবেনা ।[3]দাজ্জালের কোন্ চোখ কানা থাকবে?বিভিন্ন হাদীছে দাজ্জালের চোখ অন্ধ হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। কোন কোনহাদীছে বলা হয়েছে দাজ্জাল অন্ধ হবে। কোন হাদীছে আছে তার ডান চোখঅন্ধ হবে। আবার কোন হাদীছে আছে তার বাম চোখ হবে অন্ধ। মোটকথা তারএকটি চোখ দোষিত হবে। তবে ডান চোখ অন্ধ হওয়ার হাদীছগুলো বুখারী ওমুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে।[4] মোটকথা দাজ্জালের অন্যান্য লক্ষণগুলোকারো কাছে অস্পষ্ট থেকে গেলেও অন্ধ হওয়ার বিষয়টি কারো কাছে অস্পষ্টহবেনা।দাজ্জালের দু’চোখের মাঝখানে কাফের লেখা থাকবেঃতাছাড়া দাজ্জালকে চেনার সবচেয়ে বড় আলামত হলো তার কপালে কাফেরﻛﺎﻓﺮ )) লেখা থাকবে।[5] অপর বর্ণনায় আছে তার কপালে ( ﻙ ﻑ ﺭ ) এই তিনটি বর্ণলেখা থাকবে। প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে।[6] অপর বর্ণনায় আছেশিক্ষিত-অশিক্ষত সকল মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে।[7] মোটকথা আল্লাহমু’মিনের জন্যে অন্তদৃষ্টি খোলে দিবেন। ফলে সে দাজ্জালকে দেখে সহজেইচিনতে পারবে। যদিও ইতিপূর্বে সে ছিল অশিক্ষিত। কাফের ও মুনাফেক লোকতা দেখেও পড়তে পারবেনা। যদিও সে ছিল শিক্ষিত ও পড়ালেখা জানা লোক।কারণ কাফের ও মুনাফেক আল্লাহর অসংখ্য সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ দেখেও ঈমানআনয়ন করেনি।[8]দাজ্জালের ফিতনাসমূহ ও তার অসারতাঃআদম সৃষ্টি থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জন্য দাজ্জালের চেয়ে বড়ফিতনা আর নেই। সে এমন অলৌকিক বিষয় দেখাবে যা দেখে মানুষ দিশেহারাহয়ে পড়বে। দাজ্জাল নিজেকে প্রভু ও আল্লাহ হিসেবে দাবী করবে। তারদাবীর পক্ষে এমন কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করবে যে সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগেই সতর্ক করেছেন। মুমিন বান্দাগণ এগুলো দেখেমিথ্যুক দাজ্জালকে সহজেই চিনতে পারবে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমানআরো বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দুর্বল ঈমানদার লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমানহারা হবে।দাজ্জাল নিজেকে রাব্ব বা প্রভু হিসেবেও দাবী করবে। ঈমানদারের কাছে এদাবীটি সুস্পষ্ট দিবালোকের মত মিথ্যা বলে প্রকাশিত হবে। দাজ্জাল তারদাবীর পক্ষে যত বড় অলৌকিক ঘটনাই পেশ করুক না কেন মুমিন ব্যক্তির কাছেএটি সুস্পষ্ট হবে যে সে একজন অক্ষম মানুষ, পানাহার করে, নিদ্রা যায়, পেশাব-পায়খান করে। সর্বোপরি সে হবে অন্ধ। যার ভিতরে মানবীয় সব দোষ-গুণবিদ্যমান সে কিভাবে রব্ব ও আল্লাহ হতে পারে!! একজন সত্যিকার মুমিনেরমুমিনের বিশ্বাস হলোঃ মহান আল্লাহ সর্বপ্রকার মানবীয় দোষ-ত্রুটি হতেসম্পূর্ণ মুক্ত। কোন সৃষ্টজীবই তার মত নয়। আল্লাহকে দুনিয়ার জগতে কোনমানুষের পক্ষে দেখাও সম্ভব নয়।দাজ্জাল বর্তমানে কোথায় আছে?ফাতেমা বিনতে কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি মসজিদে গমণকরে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে নামায আদায় করলাম।আমি ছিলাম মহিলাদের কাতারে। তিনি নামায শেষে হাসতে হাসতে মিম্বারেউঠে বসলেন। প্রথমেই তিনি বললেনঃ প্রত্যেকেই যেন আপন আপন জায়গায় বসেথাকে। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদেরকেএকত্রিত করেছি? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেয়ার জন্যে একত্রিতকরেছি যে তামীম দারী ছিল একজন খৃষ্টান লোক। সে আমার কাছে আগমণ করেইসলাম গ্রহণ করেছে। অতঃপর সে মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে এমন ঘটনা বলেছেযা আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করতাম। লাখ্ম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশ জনলোকের সাথে সে সাগর পথে ভ্রমণে গিয়েছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শিকারহয়ে এক মাস পর্যন্ত তারা সাগরেই ছিল। অবশেষে তারা সাগরের মাঝখানেএকটি দ্বীপে অবতরণ করলো। দ্বীপের ভিতরে প্রবেশ করে তারা মোটা মোটাএবং প্রচুর চুল বিশিষ্ট একটি অদ্ভুত প্রাণীর সন্ধান পেল। চুল দ্বারা সমস্ত শরীরআবৃত থাকার কারণে প্রাণীটির অগ্রপশ্চাৎ নির্ধারণ করতে সক্ষম হলোনা। তারাবললঃ অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি? সে বললোঃ আমি সংবাদ সংগ্রহকারীগোয়েন্দা। তারা বললোঃ কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী? অতঃপর প্রাণীটিদ্বীপের মধ্যে একটি ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললোঃ হে লোক সকল! তোমরাএই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের কাছ থেকেসংবাদ সংগ্রহ করার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তামীম দারী বলেনঃপ্রাণীটি যখন একজন লোকের কথা বললোঃ তখন আমাদের ভয় হলো যে হতেপারে সে একটি শয়তান। তথাপিও আমরা ভীত হয়ে দ্রুত অগ্রসর হয়ে ঘরটির ভিতরেপ্রবেশ করলাম। সেখানে প্রবেশ করে আমরা বৃহদাকার একটি মানুষ দেখতেপেলাম। এত বড় আকৃতির মানুষ আমরা ইতিপূর্বে আর কখনও দেখিনি। তার হাতদু’টিকে ঘাড়ের সাথে একত্রিত করে হাঁটু এবং গোড়ালীর মধ্যবর্তী স্থানেলোহার শিকল দ্বারা বেঁধে রাখা হয়েছে। আমরা বললামঃ মরণ হোক তোমার!কে তুমি? সে বললোঃ তোমরা আমার কাছে আসতে সক্ষম হয়েছ। তাই আগেতোমাদের পরিচয় দাও। আমরা বললামঃ আমরা একদল আরব মানুষ নৌকায় আরোহনকরলাম। সাগরের প্রচন্ড ঢেউ আমাদেরকে নিয়ে একমাস পর্যন্ত খেলা করলো।অবশেষে তোমার দ্বীপে উঠতে বাধ্য হলাম। দ্বীপে প্রবেশ করেই প্রচুর পশমবিশিষ্ট এমন একটি জন্তুর সাক্ষাৎ পেলাম, প্রচুর পশমের কারণে যার অগ্রপশ্চাৎচেনা যাচ্ছিলনা। আমরা বললামঃ অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি? সে বললোঃআমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা। আমরা বললামঃ কিসের সংবাদসংগ্রহকারী?অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে এই ঘরের দিকে ইঙ্গিত করেবললোঃ হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছেযাও। সে তোমাদের নিকট থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য অধীর আগ্রহেঅপেক্ষা করছে। তাই আমরা তার ভয়ে তোমার কাছে দ্রুত আগমণ করলাম। হতেপার তুমি একজন শয়তান- এভয় থেকেও আমরা নিরাপদ নই। সে বললোঃ আমাকেতোমরা ‘বাইসান’ সম্পর্কে সংবাদ দাও। আমরা তাকে বললামঃ বাইসানের কিসম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো? সে বললোঃ আমি তথাকার খেজুরের বাগান সম্পর্কেজিজ্ঞাসা করছি। সেখানের গাছগুলো এখনও ফল দেয়? আমরা বললামঃ হ্যাঁ। সেবললোঃ সে দিন বেশী দূরে নয় যে দিন গাছগুলোতে কোন ফল ধরবেনা। অতঃপরসে বললোঃ আমাকে বুহাইরাতুত্ তাবারীয়া সম্পর্কে সংবাদ দাও। আমরা তাকেবললামঃ বুহাইরাতুত্ তাবারীয়ার কি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো? সে বললোঃআমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে? আমরা বললামঃ তথায় প্রচুরপানি আছে। সে বললোঃ অচিরেই তথাকার পানি শেষ হয়ে যাবে। সে পুনরায়বললোঃ আমাকে যুগার নামক ঝর্ণা সম্পর্কে সংবাদ দাও। আমরা তাকেবললামঃ সেখানকার কি সম্পর্কে তুমি জানতে চাও? সে বললোঃ আমি জানতেচাই সেখানে কি এখনও পানি আছে? লোকেরা কি এখনও সে পানি দিয়েচাষাবাদ করছে? আমরা বললামঃ তথায় প্রচুর পানি রয়েছে। লোকেরা সে পানিদিয়ে চাষাবাদ করছে। সে আবার বললোঃ আমাকে উম্মীদের নবী সম্পর্কেজানাও। আমরা বললামঃ সে মক্কায় আগমণ করে বর্তমানে মদীনায় হিজরতকরেছে। সে বললোঃ আরবরা কি তার সাথে যুদ্ধ করেছে? বললামঃ হ্যাঁ। সেবললোঃ ফলাফল কি হয়েছে? আমরা তাকে সংবাদ দিলাম যে, পার্শ্ববর্তীআরবদের উপর তিনি জয়লাভ করেছেন। ফলে তারা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করেনিয়েছে। সে বললঃ তাই না কি? আমরা বললাম তাই। সে বললোঃ তার আনুগত্যকরাই তাদের জন্য ভাল। এখন আমার কথা শুন। আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেইআমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভিতরেপৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করবো। তবে মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করা আমার জন্যনিষিদ্ধ থাকবে। যখনই আমি মক্কা বা মদীনায় প্রবেশ করতে চাইবো তখনইফেরেশতাগণ কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদীনার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ পাহারা দিবে।হাদীছের বর্ণনাকারী ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতের লাঠি দিয়ে মিম্বারে আঘাত করতে করতেবললেনঃ এটাই মদীনা, এটাই মদীনা, এটাই মদীনা। অর্থাৎ এখানে দাজ্জালআসতে পারবেনা। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষকেলক্ষ্য করে বললেনঃ তামীম দারীর হাদীছটি আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে।তার বর্ণনা আমার বর্ণনার অনুরূপ হয়েছে। বিশেষ করে মক্কা ও মদীনা সম্পর্কে।শুনে রাখো! সে আছে সাম দেশের সাগরে (ভূমধ্য সাগরে) অথবা আরব সাগরে। তানয় সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে। এই বলেতিনি পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন। ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেনঃ “আমিএই হাদীছটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট থেকে মুখস্থকরে রেখেছি।[9]দাজ্জালের যে সমস্ত ক্ষমতা দেখে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়বেঃক) একস্থান হতে অন্য স্থানে দ্রুত পরিভ্রমণঃ নাওয়াস বিন সামআন থেকেবর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দাজ্জালের চলার গতিসম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “দ্রুতগামী বাতাস বৃষ্টিকে যেভাবেচালিয়ে নেয় দাজ্জালের চলার গতিও সে রকম হবে।[10] তিনি আরো সংবাদদিয়েছেন যে মক্কা ও মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চল সে পরিভ্রমণ করবে।মক্কা ও মদীনার সমস্ত প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ তলোওয়ার হাতে নিয়েপাহারা দিবে।খ) দাজ্জালের সাথে থাকবে জান্নাত-জাহান্নামঃ দাজ্জালের সাথে জান্নাতএবং জাহান্নাম থাকবে। প্রকৃত অবস্থা হবে সম্পূর্ণ বিপরীত। দাজ্জালেরজাহান্নামের আগুন প্রকৃতপক্ষে সুমিষ্ট পানি এবং জান্নাত হবে জাহান্নামেরআগুন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “দাজ্জালের সাথে যাথাকবে তা আমি অবগত আছি। তার সাথে দু’টি নদী প্রবাহিত থাকবে। বাহ্যিকদৃষ্টিতে একটিতে সুন্দর পরিস্কার পানি দেখা যাবে। অন্যটিতে দাউ দাউ করেআগুন জ্বলতে দেখা যাবে। যার সাথে দাজ্জালের সাক্ষাৎ হবে সে যেনদাজ্জালের আগুনে ঝাপ দিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে পান করে। কারণ উহাসুমিষ্ট পানি। তার চোখের উপরে মোটা আবরণ থাকবে। কপালে কাফের লেখাথাকবে। মূর্খ ও শিক্ষিত সকল ঈমানদার লোকই তা পড়তে সক্ষম হবে ।[11]গ) দাজ্জাল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করবেঃ দাজ্জাল তার কর্মকান্ডে শয়তানেরসহযোগীতা নিবে। শয়তান কেবল মিথ্যা ও গোমরাহী এবং কুফরী কাজেইসাহায্য করে থাকে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃদাজ্জাল মানুষের কাছে গিয়ে বলবেঃ আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকেজীবিত করে দেখাই তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে? সে বলবেঅবশ্যই মানব। এ সুযোগে শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধরে সন্তানকে বলবেঃহে সন্তান! তুমি তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালকমুমিন।[12] হে আল্লাহ!আমরা আপনার কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।ঘ) জড় পদার্থ ও পশুরাও দাজ্জালের ডাকে সাড়া দেবেঃ দাজ্জালের ফিতনারমাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করবেন। দাজ্জাল আকাশকে আদেশদিবে বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্যে। আকাশ তার আদেশে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। যমিনকেফসল উৎপন্ন করতে বলবে। যমিন ফসল উৎপন্ন করবে। চতুষ্পদ জন্তুকে ডাক দিলেতারা দাজ্জালের ডাকে সাড়া দিবে। ধ্বংস প্রাপ্ত ঘরবাড়িকে তার নিচেলুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেনঃ “দাজ্জাল এক জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নেরআহবান জানাবে। এতে তারা ঈমান আনবে। দাজ্জাল তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণকরার জন্য আকাশকে আদেশ দিবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে, যমিন ফসল উৎপন্নকরবে এবং তাদের পশুপাল ও চতুষ্পদ জন্তুগুলো অধিক মোটা-তাজা হবে এবংপূর্বের তুলনায় বেশী দুধ প্রদান করবে। অতঃপর অন্য একটি জনসমাজে গিয়েমানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। লোকেরা তার কথাপ্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাদের নিকট থেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসবে। এতেতারা চরম অভাবে পড়বে। তাদের ক্ষেত-খামারে চরম ফসলহানি দেখা দিবে।দাজ্জাল পরিত্যক্ত ভূমিকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে।গুপ্তধনগুলো বের হয়ে মৌমাছির দলের ন্যায় তার পিছে পিছে চলতেথাকবেমুমিন।[13]ঙ) দাজ্জাল একজন মুমিন যুবককে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবেঃনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দাজ্জাল বের হয়ে মদীনারদিকে অগ্রসর হবে। যেহেতু মদীনায় দাজ্জালের প্রবেশ নিষেধ তাই সে মদীনারনিকটবর্র্তী একটি স্থানে অবস্থান করবে। তার কাছে একজন মুমিন লোক গমণকরবেন। তিনি হবেন ঐ যামানার সর্বোত্তম মুমিন। দাজ্জালকে দেখে তিনিবলবেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি সেই দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাবধান করেছেন। তখনদাজ্জাল উপস্থিত মানুষকে লক্ষ্য করে বলবেঃ আমি যদি একে হত্যা করেজীবিত করতে পারি তাহলে কি তোমরা আমার ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণকরবে? লোকেরা বলবেঃ না। অতঃপর সে উক্ত মুমিনকে হত্যা করে পুনরায়জীবিত করবে। এ পর্যায়ে যুবকটি বলবেঃ আল্লাহর শপথ! তুমি যে মিথ্যুকদাজ্জাল- এ সম্পর্কে আমার বিশ্বাস আগের তুলনায় আরো মজবুত হলো। দাজ্জালতাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাঁকে হত্যা করতে সক্ষমহবেনা।[14] মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে উক্ত যুবক দাজ্জালকে দেখেবলবেঃ হে লোক সকল! এটি সেই দাজ্জাল যা থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাবধান করেছেন। অতঃপর দাজ্জাল তারঅনুসারীদেরকে বলবেঃ একে ধর এবং প্রহার কর। তাকে মেরে-পিটে যখম করাহবে। অতঃপর দাজ্জাল তাকে জিজ্ঞেস করবে এখনও কি আমার প্রতি ঈমানআনবেনা? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ উক্ত যুবক বলবেনঃতুমি মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। তারপর দাজ্জালের আদেশে তার মাথায় করাতলাগিয়ে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। দাজ্জাল দু’খন্ডের মাঝ দিয়ে হাঁটাহাঁটিকরবে। অতঃপর বলবেঃ উঠে দাড়াও। তিনি উঠে দাড়াবেন। দাজ্জাল বলবেএখনও ঈমান আনবেনা? তিনি বলবেনঃ তুমি মিথ্যুক দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারেএখন আমার বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ হে লোক সকল!আমার পরে আর কারো সাথে এরূপ করতে পারবেনা। অতঃপর দাজ্জাল তাকেপাকড়াও করে আবার যবেহ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার গলায় যবেহ করারস্থানটি তামায় পরিণত হয়ে যাবে। কাজেই সে যবেহ করতে ব্যর্থ হবে। অতঃপরতাঁর হাতে-পায়ে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। লোকেরা মনে করবে তাকেজাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ সে জান্নাতে নিক্ষিপ্তহয়েছে। নবী (সাঃ) বলেনঃ “এই ব্যক্তি হবে পৃথিবীতে সেদিন সবচেয়ে মহাসত্যের সাক্ষ্য দানকারীমুমিন।[15]দাজ্জাল কোথা থেকে বের হবে?দাজ্জাল বের হওয়ার স্থান সম্পর্কেও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বর্ণনা দিয়েছেন। সে পূর্ব দিকের পারস্য দেশ থেকে বের হবে। সেস্থানটির নাম হবে খোরাসান। সেখান থেকে বের হয়ে সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করবে।তবে মক্কা এবং মদীনায় প্রবেশ করতে পারবেনা। ফেরেশতাগণ সেদিন মক্কা-মদীনার প্রবেশ পথসমূহে তরবারি নিয়ে পাহারা দিবে। নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “পূর্বের কোন একটি দেশ থেকে দাজ্জালেরআবির্ভাব ঘটবে যার বর্তমান নাম খোরাসানমুমিন।[16]দাজ্জাল মক্কা ও মদীনায় প্রবেশ করতে পারবেনাঃসহীহ হাদীছের বিবরণ অনুযায়ী দাজ্জালের জন্যে মক্কা ও মদীনাতে প্রবেশনিষিদ্ধ থাকবে। মক্কা ও মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল স্থানেই সে প্রবেশকরবে। ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত দাজ্জালের হাদীছেএসেছে অতঃপর দাজ্জাল বললোঃ আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বেরহওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভিতরে পৃথিবীর সমস্তদেশ ভ্রমণ করবো। তবে মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ থাকবে।যখনই আমি মক্কা বা মদীনায় প্রবেশ করতে চাইবো তখনই কোষমুক্ত তলোয়ারহাতে নিয়ে ফেরেশতাগণ আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদীনার প্রতিটি প্রবেশপথে ফেরেশতাগণ পাহারা দিবে।[17] সে সময় মদীনা শরীফ তিনবার কেঁপেউঠবে এবং প্রত্যেক মুনাফেক এবং কাফেরকে বের করে দিবে। যারাদাজ্জালের নিকট যাবে এবং তার ফিতনায় পড়বে তাদের অধিকাংশই হবেমহিলা। দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচানোর জন্য পুরুষেরা তাদের স্ত্রী,মা,বোন, কন্যা, ফুফু এবং অন্যান্য স্বজন মহিলাদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখবে।দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন থাকবে?সাহাবীগণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করেছেনদাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে তিনি বলেছেনঃ সে চল্লিশদিন অবস্থান করবে। প্রথম দিনটি হবে এক বছরের মত লম্বা। দ্বিতীয় দিনটি হবেএক মাসের মত। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের মত। আর বাকী দিনগুলো দুনিয়ারস্বাভাবিক দিনের মতই হবে। আমরা বললামঃ যে দিনটি এক বছরের মত দীর্ঘ হবেসে দিন কি এক দিনের নামাযই যথেষ্ট হবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ না; বরংতোমরা অনুমান করে সময় নির্ধারণ করে নামায পড়বে।[18]কারা দাজ্জালের অনুসরণ করবে?দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদী, তুর্কী এবং অনারব লোক। তাদেরঅধিকাংশই হবে গ্রাম্য মূর্খ এবং মহিলা। ইহুদীরা মিথ্যুক কানা দাজ্জালেরঅপেক্ষায় রয়েছে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী দাজ্জাল হবে তাদের বাদশা। তারনেতৃত্বে তারা বিশ্ব পরিচালনা করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদী এবং মহিলা।[19]তিনি আরো বলেনঃ “ইস্পাহানের সত্তর হাজার ইহুদী দাজ্জালের অনুসরণকরবে। তাদের সবার পরনে থাকবে সেলাই বিহীন চাদরমুমিন।[20]গ্রাম্য অশিক্ষিত লোকেরা মূর্খতার কারণে এবং দাজ্জালের পরিচয় সম্পর্কেতাদের জ্ঞান না থাকার কারণে দাজ্জালের অলৌকিক ক্ষমতা দেখে তারাফিতনায় পড়বে। মহিলাদের ব্যাপারটিও অনুরূপ। তারা সহজেই যে কোন জিনিষদেখে প্রভাবিত হয়ে থাকে।দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়ঃনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জালের ফিতনা হতে রেহাইপাওয়ার উপায়ও বলে দিয়েছেন। তিনি উম্মাতকে একটি সুস্পষ্ট দ্বীনের উপররেখে গেছেন। সকল প্রকার কল্যাণের পথ প্রদর্শন করেছেন এবং সকলঅকল্যাণের পথ হতে সতর্ক করেছেন। উম্মাতের উপরে যেহেতু দাজ্জালেরফিতনা সবচেয়ে বড় তাই তিনি দাজ্জালের ফিতনা থেকে কঠোরভাবে সাবধানকরেছেন এবং দাজ্জালের লক্ষণগুলো সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। যাতে মুমিনবান্দাদের জন্য এই প্রতারক, ধোকাবাজ ও মিথ্যুক দাজ্জালকে চিনতে কোনরূপঅসুবিধা না হয়।ইমাম সাফারায়েনী (রঃ) বলেনঃ প্রতিটি বিজ্ঞ মুসলিমের উচিৎ তার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-পরিবার এবং সকল নারী-পুরুষদের জন্য দাজ্জালের হাদীছগুলোবর্ণনা করা। বিশেষ করে ফিতনায় পরিপূর্ণ আমাদের বর্তমান যামানায়।দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়গুলো নিম্নরূপঃ-১) ইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরাঃ ইসলামকে সঠিকভাবে আঁকড়িয়ে ধরাএবং ঈমানের উপর অটল থাকাই দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার একমাত্রউপায়। যে মুমিন আল্লাহর নাম ও তাঁর অতুলনীয় সুমহান গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানঅর্জন করবে সে অতি সহজেই দাজ্জালকে চিনতে পারবে। সে দেখতে পাবেদাজ্জাল খায় পান করে। মু’মিনের আকীদা এই যে, আল্লাহ তা’আলা পানাহার ওঅন্যান্য মানবীয় দোষ-গুণ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। যে পানাহারের প্রতিমুখাপেক্ষী সে কখনও আল্লাহ বা রব্ব হতে পারেনা। দাজ্জাল হবে অন্ধ।আল্লাহ এরূপ দোষ-ত্রুটির অনেক উর্ধে। আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্টধারণার অধিকারী মুমিনগণের মনে প্রশ্ন জাগবে যে নিজের দোষ থেকে মুক্তহতে পারেনা সে কিভাবে প্রভু হতে পারে? মু’মিনের আকীদা এই যে, আল্লাহকেদুনীয়ার জীবনে দেখা সম্ভব নয়। অথচ মিথ্যুক দাজ্জালকে মুমিন-কাফের সবাইদুনিয়াতে দেখতে পাবে।২) দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করাঃ আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ“আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নামাযের ভিতরেদাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাইতে শুনেছি ।[21] তিনি নামাযের শেষতাশাহুদে বলতেনঃﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﻋَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟْﻘَﺒْﺮِ ﻭَﻣِﻦْ ﻋَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻭَﻣِﻦْ ﻓِﺘْﻨَﺔِ ﺍﻟْﻤَﺤْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﻤَﻤَﺎﺕِ ﻭَﻣِﻦْ ﻓِﺘْﻨَﺔِ ﺍﻟْﻤَﺴِﻴﺢِﺍﻟﺪَّﺟَّﺎﻝِ“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব, জাহান্নামের আযাব, জীবন-মরণের ফিতনা এবং মিথ্যুক দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই ।[22]৩) দাজ্জাল থেকে দূরে থাকাঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)দাজ্জালের নিকট যেতে নিষেধ করেছেন। কারণ সে এমন একজন লোকের কাছেআসবে, যে নিজেকে ঈমানদার মনে করবে। দাজ্জালের কাজ-কর্ম দেখে সেবিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হয়ে যাবে। মুমিনের জন্য উত্তম হলো সম্ভব হলেসে সময়ে মদীনা অথবা মক্কায় বসবাস করার চেষ্টা করা। কারণ দাজ্জাল তথায়প্রবেশ করতে পারবেনা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যেব্যক্তি দাজ্জাল বের হওয়ার কথা শুনবে সে যেন তার কাছে না যায়। আল্লাহরশপথ! এমন একজন লোক দাজ্জালের নিকটে যাবে যে নিজেকে ঈমানদার মনেকরবে। অতঃপর সে দাজ্জালের সাথে প্রেরিত সন্দেহময় জিনিষগুলো ও তারকাজ-কর্ম দেখে বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হয়ে তার অনুসারী হয়ে যাবে।হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।৪) সূরা কাহাফ পাঠ করাঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)দাজ্জালের ফিতনার সম্মুখিন হলে মুমিনদেরকে সূরা কাহাফ মুখস্থ করতে এবংতা পাঠ করতে আদেশ করেছেন। তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথমদশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা হতে হেফাযতে থাকবে ।[23]সূরা কাহাফ পাঠের নির্দেশ সম্ভবতঃ এজন্য হতে পারে যে, এই সূরায় আল্লাহতা’আলা বিস্ময়কর বড় বড় কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মুমিন ব্যক্তি এগুলোগভীরভাবে পাঠ করলে দাজ্জালের বিস্ময়কর ঘটনা দেখে কিছুতেই বিচলিতহবেনা। এতে সে হতাশ হয়ে বিভ্রান্তিতেও পড়বেনা।দাজ্জালের শেষ পরিণতিঃসহীহ হাদীছের বিবরণ অনুযায়ী ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)এর হাতে দাজ্জালনিহত হবে। বিস্তারিত বিবরণ এই যে, মক্কা-মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশেইসে প্রবেশ করবে। তার অনুসারীর সংখ্যা হবে প্রচুর। সমগ্র দুনিয়ায় তার ফিতনাছড়িয়ে পড়বে। সামান্য সংখ্যক মুমিনই তার ফিতনা থেকে রেহাই পাবে। ঠিক সেসময় দামেস্ক শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক মসজিদের সাদা মিনারের উপরঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। মুসলমানগণ তার পার্শ্বে একত্রিত হবে।তাদেরকে সাথে নিয়ে তিনি দাজ্জালের দিকে রওনা দিবেন। দাজ্জাল সেসময় বায়তুল মাকদিসের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। অতঃপর ঈসা (আঃ)ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে দাজ্জালকে পাকড়াও করবেন। ঈসা (আঃ)কেদেখে সে পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে শুরু করবে। ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ্যকরে বলবেনঃ “তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি কখনও রেহাইপাবেনা।মুমিন ঈসা (আঃ) তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করবেন। অতঃপরমুসলমানেরা তাঁর নেতৃত্বে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলমানদের হাতেদাজ্জালের বাহিনী ইহুদীর দল পরাজিত হবে। তারা কোথাও পালাবার স্থানপাবেনা। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবেঃ হে মুসলিম!আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর।পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবেঃ হে মুসলিম!আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদনামক গাছ ইহুদীদেরকে গোপন করার চেষ্টা করবে। কেননা সেটি ইহুদীদের বৃক্ষবলে পরিচিত।[24]সহীহ মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেনঃ( ﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻘَﺎﺗِﻞَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩَ ﻓَﻴَﻘْﺘُﻠُﻬُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺨْﺘَﺒِﺊَ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩِﻱُّ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀِﺍﻟْﺤَﺠَﺮِ ﻭَﺍﻟﺸَّﺠَﺮِ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟْﺤَﺠَﺮُ ﺃَﻭِ ﺍﻟﺸَّﺠَﺮُ ﻳَﺎ ﻣُﺴْﻠِﻢُ ﻳَﺎ ﻋَﺒْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻫَﺬَﺍ ﻳَﻬُﻮﺩِﻱٌّ ﺧَﻠْﻔِﻲ ﻓَﺘَﻌَﺎﻝَ ﻓَﺎﻗْﺘُﻠْﻪُ ﺇِﻟَّﺎﺍﻟْﻐَﺮْﻗَﺪَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣِﻦْ ﺷَﺠَﺮِ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩِ )“ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবেনা যতক্ষণ না মুসলমানেরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধকরবে। অতঃপর মুসলমানগণ ইহুদীরকে হত্যা করবে। ইহুদীরা গাছ ও পাথরেরআড়ালে পালাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু কেউ তাদেরকে আশ্রয় দিবেনা। গাছ বাপাথর বলবেঃ হে মুসলমান! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পিছনে একজন ইহুদীলুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে‘গারকাদ’ নামক গাছেরপিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবেনা। এটি ইহুদীদের গাছ বলেপরিচিত ।[25]________________________________________[1] -তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[2] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[3] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[4] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[5] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[6] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[7] – সহীহ মুসলিম, শরহুন্ নববীর সাথে (১৮/৬১)।[8] – – ফাতহুল বারী, (১৩/১০০)।[9] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[10]- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[11]- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।|[12] – সহীহুল জামে আস্-সাগীর, হাদীছ নং-৭৭৫২[13]- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[14]- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[15] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[16] – তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান, সহীহুল জামে আস্-সাগীর, হাদীছনং-৩৩৯৮। নিশাপুর, হিরাত, মরো, বালখ এবং পার্শ্ববর্তী কতিপয় অঞ্চলের নামখোরাসান।[17] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[18] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[19] – মুসনাদে ইমাম আহমাদ। আহমাদ শাকের সহীহ বলেছেন।[20] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[21] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।[22]- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।[23] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
No comments:
Post a Comment