Saturday, June 23, 2018

তাগুত কি এবং এর প্রকারভেদ?

তাগুত কি এবং এর প্রকারভেদ? লেখক: ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ) অনুবাদঃ ইউসুফ ইয়াসীন তাগুত কি ও এর প্রকারভেদ:
তাওহীদের মৌলিক উপাদান (রুকন) তথা ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﻟﻠﻪ ‘র মৌলিক উপাদানরুকন হচ্ছে এমন বিষয়, যার অনুপস্থিতিতে অন্য একটি বিষয়ের অনুপস্থিতি অপরিহার্য হয়েউঠে। রুকন অবশ্যই মূল বিষয়টির অন্তর্গত হওয়া চাই। যেহেতু রুকন কোন জিনিসেরআভ্যন্তরীণ বা ভেতরের বিষয়, সেহেতু শুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি এর উপর নির্ভরশীল। অতএবকোন জিনিসের রুকন ব্যতীত তা সহীহ বা শুদ্ধ হয় না। রুকন কি জিনিস, এটা জানার পরআপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে, যে তাওহীদ আল্লাহ তায়ালা আপনার ওপর ওয়াজিব করেদিয়েছেন, সে তাওহীদেরও সালাতের মতোই রুকন আছে। সালাত যেমন তার রুকন যথা-তাকবীরে তাহরিমা, র€কু, সেজদা, শেষ বৈঠক ইত্যাদি আদায় করা ব্যতীত শুদ্ধ হয় না,কোনো ব্যক্তি যদি সালাতের কোনো রুকন বাদ দেয় তাহলে তার সালাত যেমন ভাবেবাতিল হয়ে যায়, তেমনি ভাবে কোনো ব্যক্তি যদি তাওহীদের কোনো একটি রুকন বাদদেয়, তাহলে
সে ব্যক্তিও আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী ব্যক্তিতে পরিণত হতে পারবে না।এমতাবস্থায় কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ‘ তার কোনো কাজে আসবে না, সে আর মুসলিমথাকবে না বরং সে কাফেরে পরিণত হয়ে যাবে।তাওহীদের দুটি রুকন (মৌলিক উপাদান) তাওহীদের প্রথম রুকন বা মৌলিক বিষয় হচ্ছে “কুফর বিতত্বাগুত বা তাগুতকে অস্বীকার করা”। আর দ্বিতীয় রুকন বা মৌলিক বিষয় হচ্ছে “ঈমান বিল্লাহ বাএক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা”। এর প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালার নিম্মোক্ত বানীঃ“যেব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করলো আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলো, সে এমন এক শক্তরজ্জু ধারণ করলো যা কখনো ছিড়ে যাবার নয়”। (আল-বাক্বারাহ ২: ২৫৬)ﺎ ﻣ ﺑ ﻠ উপরোক্ত আয়াতের ﻓﻤﻦ ﻳﻜﻔﺮ ﺍﻟﻄﺎﻏﻮﺕ হচেছ ১ম রোকন, ﺆﻥ ﺑ ﮦ ﻝ হচেছ ২য়রোকন এবং ﺍﻟﻌﺮﻭﺓ ﺍﻟﻮﺛﻘﻰ (শক্ত রজ্জু) বলতে কলেমা কে বুঝানো হয়েছে। আর এটাইমূলতঃ তাওহীদের কলেমা।সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে রাসল (সঃ) ইরশাদ করেছেনঃ “যে ব্যক্তি লা-ইলাহাইল্লাল্লাহ বললো আর আল্লাহ ছাড়া অন্য সকল উপাস্যকে অস্বীকার করলো তার জান ও মালপবিত্র “(অর্থাৎ কাফেরদের জান ও মালের মতো গনিমতের মাল নয়।) এবং তার হিসাবের ভারআল্লাহর ওপরই ন্যস্ত (অর্থাৎ মনের কুফরীর বিচার আল্লাহই করবেন।)প্রথম রুকনঃ তাগুতকে অস্বীকার করাপ্রিয় পাঠক ! (আল্লাহ আপনাকে সঠিক পথের দিশা দান কর€ন) আপনাকে জেনে রাখতেহবে যে, তাগুতের কুফরী ব্যতীত একজন বান্দা কখনো “মুওয়াহ্যিদ” (আল্লাহর একত্বেবিশ্বাসী) হতে পারে না। আর তাগুত কি জিনিস তা জানা ব্যতীত, তাগুতকে অস্বীকার করাকখনো সম্ভব নয়।তাগুত এর আভিধানিক সংজ্ঞাঃ তাগুত শব্দের অর্থ হচ্ছে সীমালংঘনকারী, আল্লাহদ্রোহী,বিপথে পরিচালনাকারী। তাগুত শব্দটি আরবী (তুগইয়ান) শব্দ থেকে উৎসারিত,যার অর্থসীমালংঘন করা, বাড়াবাড়ি করা, স্বেচ্ছাচারিতা। শব্দের ক্রিয়ামূল (ত্বগা) এবং বহুবচন । যেমন পানিরএকটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। নূহ (আঃ) এর সময় যখন জলোচ্ছাস হয়েছিল তখন পানি তার এসীমা অতিক্রম করেছিল, এ ঘটনাকে কোরআনে এভাবে বলা হয়েছেঃ ‘‘যখনজ্বলোচ্ছাস হয়েছিল তখন আমি তোমাদেরকে চলন্ত নৌযানে আরোহন করিয়েছিলাম”।(সূরা, হাক্কা-৬৯:১১)কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা সাধারণ সীমালংঘন এবং সুনির্দিষ্ট সীমালংঘনের বর্ণনাদিতে ব্যবহার করেছেন। যেমন সাধারন সীমালংঘন অর্থে কোরআনে ক্রিয়াটি ব্যবহৃতহয়েছে-ﻛَﻼَّ ﺇِﻥَّ ﺍﻹِْﻧﺴَﺎﻥَ ﻟَﻴَﻄْﻐَﻰ অর্থাৎ “বস্তুত মানুষতো সীমালংঘন ( ﻟَﻴَﻄْﻐَﻰ লা ইয়াতগা) করেইথাকে।” (সূরা, ‘আলাক- ৯৬:৬)ﺃَﻻَّ ﺗَﻄْﻐَﻮْﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤِﻴﺰَﺍﻥِ “যাতে তোমরা সীমালংঘন ( ﺗَﻄْﻐَﻮ লা তাতগা) না কর মানদন্ডে।” (সূরা, আররাহমান-৫৫:৮)সুনির্দিষ্ট সীমালংঘন অর্থে ক্রিয়াটি ব্যবহৃত হয়েছে (হালাল খাবার সম্পর্কে): “তোমাদিগকেআমি যা দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তুসমূহ খাও এবং সীমালংঘন করো না, তাহলে তোমাদেরউপর আমার ক্রোধ নেমে আসবে এবং যার উপর আমার ক্রোধ নেমে আসবে সে ধ্বংসহয়ে যায়।” (সূরা, ত্ব-হাঃ ৮১)যারা অবিশ্বাসী হয়ে সীমালংঘন করে আল্লাহ তাদের জন্যও এ ক্রিয়া ব্যবহার করেছেন। যারাআল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে রব এবং ইলাহ (ইবাদতের যোগ্য) হিসেবে গ্রহন করেসীমালংঘন করেছে কোরআনে সে কাফিরদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা (ত্বা-গি-ন)বলেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ “আর সীমালংঘনকারীদের (লিত ত্বাগিন) জন্যরয়েছে নিকৃষ্ট পরিণাম।” (সূরা, ছোয়াদ-৩৮:৫৫) “প্রকাশ করা হবে জাহান্নাম, অনন্তর যেসীমালংঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দেয়।” (সূরা, নাযিয়াত-৭৯: ৩৬-৩৮) অর্থাৎ“ছামুদসম্প্রদায় অবাধ্যতায় (বি ত্বাগওয়াহা~) অস্বীকার করেছিল।” (সূরা, শামস-৯১:১১)আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাগুতকে বর্জনের অপরিহার্যতাপ্রত্যেক ব্যক্তির এই জ্ঞান থাকা উচিৎ যে,সমস্ত জীব ও জড়ের সূচনা ও কর্তৃত্ব মহানআল্লাহর।সালাত, যাকাত বা অন্যান্য ইবাদতের পূর্বে যে দৃঢ় ব্যাপার মহান আল্লাহ আদম (আঃ) এরসন্তানদের আদেশ করেছেন তা হল আল্লাহ তা’য়ালা একত্বের প্রতি ঈমান আনয়ন করা এবংঅন্য সমস্ত উপাস্যগুলোকে (তাগুত) পরিত্যাগ ও অস্বীকার করা।এর জন্যই আল্লাহ জীব সৃষ্টি করলেন, নবীদের প্রেরণ করলেন, আসমানীকিতাবগুলো নাযিল করলেন এবং আদেশ দিলেন জিহাদ ও শাহাদাতের। এর জন্যই মহান আল্লাহরবান্দা ও শয়তানের অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে শত্রুতা আর এর দ্বারাই মুসলিম জাতি ও সঠিকখিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ “আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন এবং মানুষকেএইজন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।” (সূরা-যারিয়াত: ৫৬) এর অর্থ একমাত্র আল্লাহরই ইবাদতকরা। তিনি আরও বলেনঃ “আল্লাহর ইবাদত করিবার ও তাগুতকে বর্জন করবার নির্দেশ দিবার জন্যআমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।” (সূরা-নাহল: ৩৬)কোন ইলাহ নাই আল্লাহ ব্যতীত (আক্ষরিক কোন উপাস্য বা ইবাদতের যোগ্য কোন কিছুবা কেউ নাই একমাত্র আল্লাহ ছাড়া), এই বিশ্বাস হচ্ছে ইসলামের মূল বা ভিত্তি। এই বিশ্বাসেরঅবর্তমানে কোন দাওয়া, জিহাদ, সালাত, সওম, যাকাত বা হজ্জ কিছুই গ্রহণযোগ্য হবে না।কোন ব্যক্তিকেই জাহান্নামেরআগুন থেকে বাচাঁনো যাবে না যদি না সে এই ভিত্তির প্রতিঈমান না এনে থাকে। কারণ এটাই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের প্রতি আদেশকৃতঅলঙ্ঘনীয় ভিত্তি। এই ভিত্তির অবর্তমানে দ্বীন-ইসলামের অন্যান্য স্তম্ভগুলো কোনব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন হতে নিরাপদে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ“—-যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে সে এমন এক মযবুতহাতল ধরবে যা কখনও ভাঙ্গবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা-বাকারা:২৫৬)মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ “যারা ত্বাগুতের ইবাদত হতে দূরে থাকে এবং আল্লাহর অভিমূখীহয়, তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। অতএব সুসংবাদ দাও আমার বান্দাদেরকে।” (সূরা-যুমার:১৭)লক্ষ্য করুন কেমন করে আল্লাহতা’আলা তাঁর নিজের প্রতি ঈমান আনার পূর্বে সকল (মিথ্যা) উপাস্যদের অস্বীকার ও অবিশ্বাসকরার কথা বলেছেন, যেমন তিনি ঈমান আনয়নের পূর্বে কুফরকে ত্যাগ করার কথাবলেছেন।লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এই শব্দগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদের আদেশদিয়েছেনযা কিনা ইসলামের এই মজবুত ভিত্তির গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতির দিকে লক্ষ্য আরোপ করে।অতএব, সকল (মিথ্যা) উপাস্যদের চরম মাত্রায় অস্বীকার করা ব্যতীত মহান আল্লাহর প্রতিএকনিষ্ট ঈমান পোষণ করা যায় না। তাগুতকে চেনার পর নিশ্চয়ই তাগুতকে অস্বীকার করারঅপরিহার্যতা কি বুঝতে পারছেন। কারণ এটা অসম্ভব যে, কোন ব্যাপারে বিশ্বাস করা, যতক্ষননা এ বিশ্বাসের বিপরীত কিছুকে অস্বীকার ও অবিশ্বাস করা হয়। উদাহরণস্বরুপ কেউ যদিদাবী করে, ‘আমি এক ইলাহকে বিশ্বাস করি।’অত:পর সে বলল, ‘আমি দুই ইলাহকে বিশ্বাস করি’।ঐ ব্যক্তির দ্বিতীয় উক্তি প্রথম স্বীকারোক্তিকে মিথ্যায় পরিণত করে বা অস্বীকারকরে। কারণ দ্বিতীয় উক্তি প্রথম উক্তির সম্পূর্ণ বিপরীত। এর অর্থ হচ্ছে তার একটা দাবীমিথ্যা অথবা উভয়টিই মিথ্যা। এজন্যই ঐরকম উক্তি সত্যকে মিথ্যা এবং অগ্রহনযোগ্য করেদেয়। সুনিশ্চিত সত্য একটা ব্যাপারে দু‘টি বিপরীতমুখী দিক থাকতে পারে না, যা ঐ নিশ্চিতবিষয়কে অস্বীকার করে।তাগুতকে অস্বীকার করা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের অনিবার্য দাবী। তাওহীদের প্রথমরুকনই হচ্ছে তাগুতকে অস্বীকার করা, সুতরাং তাগুতকে বর্জন না করলে আল্লাহর প্রতিঈমানের দাবী হবে অর্থহীন। ঈমানের প্রথম স্তম্ভ আল্লাহকে বিশ্বাস করা এবং দৃঢ়ভাবেঘোষনা দেয়া । প্রথম অংশ অস্বীকার করে দ্বিতীয় অংশ এর বিরোধী বা বিপরীতকোন কিছুকে।নিচের আয়াতটি এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয় যে, ত্বাগুতকে মেনে নেয়া এককভাবেআল্লাহর ইবাদত করার সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ অর্থাৎ “আমিপ্রত্যেক জাতির নিকট রাসুল প্রেরণ করেছি আল্লাহর ইবাদত করার এবং তাগুতকে বর্জন করারনির্দেশ দেবার জন্য।” (সূরা, নাহল-১৬:৩৬) সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করল না সেনবীদের মূল দাওয়াতকে অস্বীকার করল এবং মূলতঃ আল্লাহর ইবাদত করতে অস্বীকারকরল। কারণ প্রত্যেক নবী তাদের কওমকে তাগুতের ইবাদতকে পরিত্যাগ করে একআল্লাহর ইবাদত করার আহবান জানিয়েছিলেন।এখন কেউ যদি নিজেকে ঈমানদার দাবী করে তাকে অবশ্যই তাগুতকে বর্জন করতেহবে। কারণ যে কালেমার স্বীকৃতি দিয়ে সে ইসলামে এসেছে সে কলিমার প্রথমাংশঘোষণা করার মাধ্যমে যাবতীয় বাতিল মা‘বুদকে অর্থাৎ তাগুত বর্জনের দৃঢ় ঘোষণাদিয়েছে এবং দ্বিতীয় অংশ ঘোষণার মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহকে ইলাহ হিসাবে মেনেনিয়েছে। সুতরাং তাগুতকে বর্জন না করলে ঈমানের দাবী মিথ্যা প্রমানিত হবে। যারা এইতাগুতদের মানে তারাআল্লাহকে মানতে পারে না, আর যারা আল্লাহকে মানে তারা তাগুতদেরমানতে পারে না। তবে হ্যাঁ, এমন অনেক ব্যক্তি আছে আল্লাহকে মানে আবারতাগুতদেরকেও মানে, কিন্তু আসলে যে আল্লাহকে মানা হয় না এ বোধ তাদের নেই।আর বর্তমানে অধিকাংশ লোকদের অবস্থাই এরকম।উদাহরণস্বরূপ, কোরআন মাজীদে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা ঐ ব্যক্তির ঈমানেরমূল্যহীনতার কথা বলেছেন যে ব্যক্তি নিজেকে ঈমানদার দাবী করে আবার তাগুতেরকাছে বিচার-ফায়সালা চায়, আল্লাহ তা‘য়ালা বলেনঃ “আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি, যারা দাবীকরে যে, আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে তারপ্রতি তারা ঈমান আনয়ন করেছে। তারা বিরোধপূর্ণ বিষয়কে ফয়সালার জন্য তাগুতের দিকেনিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি তাকে (তাগুতকে) অমান্য করার জন্য নির্দেশ দেয়াহয়েছে।” (আন-নিসাঃ ৬০)যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে কিংবা আল্লাহর পাশাপাশি তাগুতের ইবাদত করে তাদের উপর আল্লাহরলানৎ বর্ষিত হবে।আল্লাহতা‘য়ালা বলেন- “তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশপ্রাপ্ত হয়েছে, যারা মান্য করে প্রতিমা ও শয়তানকে এবং কাফেরদেরকে বলে যে, এরামুসলমানদের তুলনায় অধিকতর সরল সঠিক পথে রয়েছে। এরা হলো সে সমস্ত লোক,যাদের উপর লা’নত করেছেন আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং। বস্তুতঃ আল্লাহ যার উপর লা’নত করেনতুমি তার কোন সাহায্যকারী খুঁজে পাবে না”। (সূরা নিসা ৪:৫১-৫২)পূর্ববর্তী জাতি যারা তাগুতের ইবাদত করেছিল তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেনঃ “বলুনঃ আমিতোমাদেরকে বলি, তাদের মধ্যে কার মন্দ প্রতিফল রয়েছে আল্লাহর কাছে? যাদেরপ্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন, যাদের প্রতি তিনি ক্রোধাম্বিত হয়েছেন, যাদেরকতককে বানর ও শুকরে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন এবং যারা শয়তানের আরাধনা করেছে,তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সত্যপথ থেকেও অনেক দূরে।” (সূরা মায়েদাহ-৫:৬০)আর যারা তাগুতের ইবাদতকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তাদের সুসংবাদ প্রদান করেনঃ“যারা শয়তানী শক্তির পূজা-অর্চনা থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহ অভিমুখী হয়, তাদেরজন্যে রয়েছে সুসংবাদ। অতএব, সুসংবাদ দিন আমার বান্দাদেরকে।যারা মনোনিবেশ সহকারেকথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেনএবং তারাই বুদ্ধিমান।” (সূরা যুমার ৩৯:১৭-১৮)যারা তাগুতের ইবাদতকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তাদের ওয়ালী হবেনঃ “যারা ঈমানএনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকেআলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকেআলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখেরঅধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে”। (সূরা বাকারা ২:২৫৭)তাগুত শব্দের শর‘য়ী সংজ্ঞাএখানে আমরা আলোচনা করব তাগুত শব্দের শার’য়ী অর্থ নিয়ে তা, এজন্য যে কোরআন-সু্ন্নাহয় যখন কোন শব্দ ব্যবহৃত হয় তখন তার একটা নির্দিষ্ট শার’য়ী অর্থ দাড়ায়। তাগুতশব্দটিআল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত ওহী দ্বারা সাব্যস্ত, যা আক্বীদার সাথে সম্পৃক্ত। তাগুত’ এর ভাষাগতমূল (ত্বা-গি-ন) এর মত একই রকম মূল হলেও তাগুত হচ্ছে সীমালংঘনের সুনির্দিষ্ট ধরণ।সীমালংঘন করলেই ত্বাগুত হয়ে যায় না, যেমন আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন পবিত্র (হালাল)খাবার খাওয়ার জন্য এবং এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি বা সীমালংঘন না করার জন্য (সূরা, ত্ব-হা ২০:৮১)। এখনকেউ যদি হারাম খায় তাহলে সে ত্বাগুত হয়ে যাবে না, বরং সে অবাধ্য হবে। এরকম অন্যান্যপাপের ক্ষেত্রেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের পাপ বা সীমালংঘন কুফর, শিরক্,নিফাক্ পর্যন্ত পৌছতে পারে কিন্তু এ কারণে কেউ ত্বাগুত হয়ে যায় না। বরং ত্বাগুত হবে ঐরকম সীমালংঘনের ক্ষেত্রে যখন কোন ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর সাথে শরীক্করে। সুতরাং একথা সুস্পষ্ট, যে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করে সে মুশরিক কিন্তু সেত্বাগুত নয়। আল্লাহ তাকে ত্বা-গি-ন বলেছেন। আর তাগুত হচ্ছে সে যে নিজেকে (মিথ্যা)রব এবং ইলাহ (অর্থাৎ ইবাদতের যোগ্য) বানিয়ে নেয়। এজন্যই সব তাগুতেরা ত্বা-গি-ন কিন্তুসব ত্বা-গি-নেরা তাগুত নয়।যে ব্যক্তি আল্লাহর অধিকার, গুনাবলী, কার্যাবলী ও সত্তার দাবীতে সীমালংঘন করে সেতাগুত। আল্লাহ ব্যতীত যে কেউ ইবাদত গ্রহন করে বা দাবী করে সে তাগুত এবং যেকেউ আল্লাহর গুনাবলী দাবী করে সেও ত্বাগুত। তাগুত হচেছ সেই ব্যক্তি যে নিজেরপ্রতি আল্লাহর কার্যাবলী বা গুনাবলী আরোপ করে। যেমন ফেরাউন আল্লাহ দ্রোহীহয়েছিল এবং সীমালংঘন করেছিল, আল্লাহ সার্বভৌমত্বের মালিক অথচ সে নিজে মিসরেরসার্বভৌমত্ব দাবী করেছিল। সে লোকদেরকে জড়ো করে ভাষণ দিয়েছিল যাকোরআনে উল্লেখ করা হয়েছেঃ “ফেরাউন তার জাতির উদ্দেশ্যে (এক) ভাষণ দিলো।সে বললো, মিশরের সার্বভৌমত্ব কি আমার নয়? তোমরা কি দেখছো না যে, এইনদীগুলো আমার (রাজত্বের) অধীনেই বয়ে চলছে——–।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:৫১)আল্লাহতা‘য়ালা তাকে ‘ত্বাগা’ বলেছেন সূরা ত্বাহার ২৪ নং আয়াতে এবং মুসা (আঃ) কে নির্দেশদিয়েছিলেন তার কাছে যাওয়ার জন্য- “ফেরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালংঘনকরেছে।” শরীয়তের পরিভাষায়, এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই তাগুত যে, আল্লাহদ্রোহীহয়েছে এবং সীমালংঘন করেছে, আর আল্লাহর কোনো হককে নিজের দিকেসম্পর্কযুক্ত করেছে এবং এমন বিষয়ে নিজেকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ বানিয়েছে, যাএকমাত্র আল্লাহর জন্য খাস।সুস্পষ্ট ভাবে তাগুত এর অর্থ হচ্ছে, কোন মাখলুক (সৃষ্টি) নিন্মোক্ত তিনটি বিষয়ের যেকোন একটি বিষয়কে (আল্লাহর স্থলে) নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করাঃ-কোন মাখলুক(সৃষ্টি) কর্তৃক আল্লাহতা‘য়ালার কার্যাবলীর যে কোন কার্য সম্পাদনের বিষয়টি নিজের দিকেসম্পর্কযুক্ত করা। যেমন সৃষ্টি করা, রিজিক দান অথবা শরীয়ত (বিধান) রচনা। এসব বিষয়গুলোসম্পাদনের ব্যাপারকে যে ব্যক্তি নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করবে (অর্থাৎ কেউ যদিবলে, আমি সৃষ্টি করি,আমি বিধান দেই) সেই তাগুত ।কোন মাখলুক (সৃষ্টি) আল্লাহতা‘য়ালার কোন সিফাত বা গুন কে নিজের দিকে সম্পর্কযুক্তকরা। যেমন ইলমে গায়েব জানা। যদি কেউ তা করে (অর্থাৎ বলে আমি এলমে গায়েব জানি)তাহলে তাকে তাগুত হিসেবে গন্য করা হবে।যে কোন ইবাদত মাখলুক কর্তৃক (বা সৃষ্টির) এর উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা । যেমনঃ দোয়া,মানত, নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই অথবা বিচার ফায়সালা চাওয়া। যদি (কোন মাখলুক) এসব ইবাদতগ্রহন করে, দাবীকরে, আকাঙ্খা করে অথবা (নিজের জন্য) সম্পাদন করে, তাহলে সেইতাগুত।এমনকি কেউ তার জন্য ইবাদত নিবেদন করলে যদি সে নীরব থাকে তাহলেও সে ত্বাগুতবলে গন্য হবে, যতক্ষন পর্যন্ত না সে নিজেকে এ থেকে পবিত্র ও মুক্ত করে নেয়এবং এ হক্ আল্লাহর একথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়।উপরোক্ত যে তিনটি বিষয়ে আলোচনা করেছি, তার যে কোন একটি যদি কেউ নিজেরদিকে সম্পর্কযুক্ত করে বা নিজের জন্য সম্পাদন করে তাহলে সে তাগুত হিসেবে গন্যএবং নিজেকে আল্লাহর সমকক্ষ করে নিল। ইমাম আত্ তাবারী (রহঃ) বলেন, “আল্লাহর দেয়াসীমালংঘনকারী মাত্রই তাগুত বলে চিহ্নিত, যার অধীনস্থ ব্যক্তিরা চাপের মুখে তার ইবাদতকরে বা তাকে তোষামোদ করার জন্য বা তার আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য তার ইবাদত করে।এ (তাগুত) উপাস্যটি মানুষ কিংবা শয়তান বা মূর্তি অথবা অন্য যেকোন বস্তু হতেপারে।”(তাফসীরে তাবারী, ইফাবা/৫ম খন্ড, ২৫৬ নং আয়াতের তাফসীর)সাইয়্যেদ আবুল আ‘লা মওদুদী তাহফীমুল কোরআনে সূরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতেরতাফসীরে তাগুতের ব্যাখ্যায় বলেন, “আভিধানিক অর্থে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাগুতবলা হবে,যে নিজের বৈধ অধিকারের সীমালংঘন করেছে। কোরআনের পরিভাষায় তাগুতএমন এক বান্দাকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই প্রভূএবং রব হবার দাবীদার সাজে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের বন্দেগী এবং দাসত্বেনিযুক্ত করে। কোন ব্যক্তি এই তাগুতকে অস্বীকার না করা পর্যন্ত কোন দিন সঠিকঅর্থে আল্লাহর মু‘মিন বান্দা হতে পারে না।”আল্লামা ড: মুহাম্মদ তকীউদ্দীন হেলালী ও আল্লামা ড: মুহাম্মদ মুহসিন খান কর্তৃক অনুদিতকুরআন মাজীদের ইংরেজী অনুবাদের সূরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতে উল্লেখিত‘তাগুত’শব্দের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- “ The word ‘Taaghoot’ covers a wide range ofmeaning: it means everything worshipped other that Allah, i.e. all false deities. It maybe satan, devils,idols, stones, sun, stars, human beings.” অর্থাৎ “তাগুত” শব্দটি বিস্তৃত অর্থবোঝায়ঃ এটার অর্থ আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত করা হয়। যেমন সকল মিথ্যা উপাস্য; এটা শয়তান,মৃত ব্যক্তির আত্মা, মুর্তি, পাথর, সূর্য, তারকা, অথবা কোন মানুষও হতে পারে। (The NobleQur’an .English Translation , পৃষ্ঠা ৫৮)সাইয়্যেদ কুতুব (রহ:) বলেন, “তাগুত বলতে সেইসব ব্যক্তি ও ব্যবস্থাকে বোঝায়যেগুলো ঐশী দ্বীন এবং নৈতিক, সামাজিক ও আইন-শৃঙ্খলাকে অবমাননা করে এবং আল্লাহনির্দেশিত বা তার দেয়া দিক-নির্দেশনা থেকে উদ্ভুত নয় এমন সব মূল্যবোধ ওরীতিনীতির ভিত্তিতে এই জীবন ব্যবস্থা পরিচালনা করে।” (তাফসীরে ফি যিলালিলকোরআন)ইমাম মালেক (রহ:) তাগুতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেনঃ “এমন প্রত্যেক জিনিসকেইতাগুত বলা হয়, আল্লাহ তা‘য়ালাকে বাদ দিয়ে যার ইবাদত করা হয়।” (ফতহুল ক্বাদীর, আল্লামাশওক্বানী) এ সংজ্ঞাটি উত্তম এবং ব্যাপক অর্থজ্ঞাপক। আল্লাহ ব্যতীত যারই ইবাদত করা হয়সেই এ সংজ্ঞার অন্তর্ভূক্ত। যেসব উপাস্যকে ‘তাগুত’ হিসেবে গন্য করা হয় সেগুলোরমধ্যে রয়েছেঃমূর্তি, এমন সব কবর, গাছ, পাথর ও অচেতন পদার্থ যে গুলোর উপাসনা করা হয়;আল্লাহর আইন ব্যাতীত এমন সব আইন যার মাধ্যমে বিচার ফায়সালা চাওয়া হয়;এমনসব বিচারক তাগুতের অন্তর্ভূক্ত যারা আল্লাহর আইনের বিরোধী আইনদ্বারা মানুষেরমধ্যে বিচার ফায়সালা করে;শয়তান, যাদুকর, গনক (যারা ইলমে গায়েবের ব্যাপারে কথা বলে);উপাস্য হতে যে রাজী;যারা আইন রচনা বা মানুষের জন্য হালাল-হারাম নির্ধারণ করে কিংবা করার অধিকার রাখে বলে মনেকরে;প্রধান প্রধান তাগুততাগুতের সংখ্যা অনেক। তবে পাঁচ ধরণের তাগুত নেতৃত্বের আসনে রয়েছেঃ১. গায়রুলাহর ইবাদতের দিকে আহবানকারী শয়তান;২. আল্লাহর আইন পরিবর্তনকারী জালেম শাসক;৩. আল্লাহ তা‘য়ালার নাযিলকৃত বিধান ছাড়া যে বিচার-ফায়সালা করে;৪. আল্লাহ ব্যতীত যে ব্যক্তি এলমে গায়েব জানে বলে দাবী করে;৫. আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয় এবং সে এই ইবাদত গ্রহণে রাজি বা খুশি থাকে;তাগুত সম্পর্কে জানতে আরও পড়ুন,তাগুত – সংক্ষিপ্ত আলোচনাগ্রন্থনা: শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন ইবরাহীম আল কার‘আওয়ীঅনুবাদ: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়াসম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহীসৌজন্যেঃ ইসলাম হাউসএবং,গ্রন্থঃ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী ফিকাহ (প্রথম খণ্ড)লেখকঃ মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আত তুয়াইজিরিসৌজন্যেঃ ইসলাম হাউস

No comments:

Post a Comment

প্রশ্ন: সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যদি কেউ সারা জীবন সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতি নেয়ার পর তার জন্য করণীয় কি?

প্রশ্ন: সুদী ব্যাংকে চাকুরী করার বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে যদি কেউ সারা জীবন সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে তাহলে চাকুরী থেকে অব্যহতি নেয়...